ছোট্ট একটি পতঙ্গ মশা আর এ মশার কাছে ধরাশায়ী মানুষ। হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগীর চাপ এবং মৃত্যুর মিছিল প্রমাণ করে ছোট একটি পতঙ্গের কাছে আমরা পরাজিত। মনের মধ্যে কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। মশার কাছে পরাজয় আর কতদিন? এই দায় কার? জনগণ, নগরবাসী, সরকার, সিটি কর্পোরেশন না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়? একজন গবেষক হিসেবে আমারও কি দায়ী নই?
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ডেঙ্গু ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গুরবাহক এডিস মশা পরিবর্তিত পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডেঙ্গু ভাইরাসের সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা না থাকলেও এটি অনুমান করা যায় যে করোনাভাইরাসের মতো এটিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে পরিবর্তন করে নিতে সক্ষম।
ডেঙ্গুবাহক এডিস মশার আচরণ পরিবর্তন ও অভিযোজন ইতিমধ্যে আমরা প্রমাণ করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু তবে বেশিরভাগ দেশেই ডেঙ্গুরের মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনেই ছয় হাজার ২৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৪ জন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৭শত ৫ জন জন মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর দিক থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এগিয়ে। এছাড়া কক্সবাজার, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর ইত্যাদি জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে বলে আমাদের গবেষণায় প্রতীয়মান হচ্ছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় সামনের দিনগুলোর পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে। সেপ্টেম্বর মাসে একে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অক্টোবরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই যেকোনো রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার হিসাব এবং পর্যবেক্ষণ করে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার অতি উচ্চ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৩,২১,১৭৯ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৭০৫ জন মারা গেছে।
২০২৩ সালে বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার (CFR) ছিল ০.৫ শতাংশ আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.৫৯ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মৃত্যুহার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা খুব সফলভাবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার (CFR) কমাতে পেরেছে। পৃথিবীতে ডেঙ্গুর অন্যতম ঝুঁকির দেশ হচ্ছে ব্রাজিল এবং ফিলিপিন। এই দেশগুলোয় ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম।