গত ৮ আগস্ট বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন সরকারের কাছে সবারই প্রত্যাশা, বিগত সরকারের রেখে যাওয়া সব জঞ্জাল দূর করে দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন একটা সমাজ গঠনের মধ্য দিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা হবে।
এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে রাষ্ট্রকাঠামোয় আমূল সংস্কার করে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হবে। সেক্ষেত্রে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সংস্কার করে নির্বাচন পদ্ধতিতে নতুন ধারণা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এক কথায়, দেশের সার্বিক সংস্কার করতে হবে। অতঃপর স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সর্বজনের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা আস্থা রাখতে চাই, এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার ওপর বর্তিত এ গুরুদায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সক্ষম হবে। মনে রাখতে হবে, বিগত সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো সক্রিয় রয়েছে, সামনে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে, তাই সাবধানে পথ চলতে হবে।
এবার আসা যাক রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গে। দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে একটিই কথা, তা হলো রাষ্ট্র সংস্কার। ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ শব্দটি অনেক ছোট হলেও এর ব্যাপকতা অনেক বেশি। দেশের বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, লেখক, গবেষক এবং সুশীল সমাজসহ অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি রয়েছেন, যারা নিশ্চয়ই রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে তাদের মতামত দেবেন। তবে আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কিংবা সংবিধান বিশেষজ্ঞ নই, আমি অতি সাধারণ একজন ব্যক্তি। আমি মনে করি,
সরকার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচনব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে একেবারে রুট লেভেল থেকে শুরু করতে হবে। যেমন-গ্রাম থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, এর পরে জেলা এবং জাতীয় নির্বাচন। স্বাধীনতা-পরবর্তী গতানুগতিক পদ্ধতি পরিহার করে গ্রাম থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নতুন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে নির্বাচন-পরবর্তী ফলাফলকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করার সুযোগ না থাকে। এমন একটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারলে সমাজে থাকবে না কোনো বৈষম্য ও দুর্নীতি, রোহিত হবে প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা। এতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
আমাদের ছোটবেলায় গ্রাম সরকার পদ্ধতি চালু হয়েছিল। পরবর্তীকালে উপজেলা পদ্ধতি চালু হয়। কিন্তু সরকারের নীতির ধারাবাহিকতার অভাবে সেটি কার্যকর হতে পারেনি। আমাদের দেশে যে নির্বাচনব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, তাতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ইউনিয়ন, উপজেলা থেকে জেলা, এমনকি জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ক্ষমতা (পেশি শক্তি) ও অর্থ লেনদেনের প্রভাবমুক্ত রাখা খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে গ্রাম থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন-সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক অর্থ লেনদেন হয়, যা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি ওই অর্থ উত্তোলনের প্রয়োজনে দুর্নীতি করতে বাধ্য হয়। তাই এ ধরনের নির্বাচনব্যবস্থাকে পরিহার করে একটি নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। আমার ধারণা, এতে একক ক্ষমতার অবসান হবে। শুধু তাই নয়, এতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করি। আসলে আমাদের শুরু করতে হবে গ্রাম পর্যায় থেকে।