৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান দেশের স্বৈরাচারী অপশাসক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। ওই দিন দুপুরে হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা-ব্যবস্থার সংস্কারকামী আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ গালাগাল দিয়ে এবং দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলন নস্যাতের অপপ্রয়াস চালিয়ে হাসিনা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে স্বৈরাচার পতনের গণ-অভ্যুত্থানে রূপান্তর করেছিলেন। সবচেয়ে জঘন্য পদক্ষেপটি ছিল ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে তাদের হত্যালীলায় ঠেলে দেওয়া।
১৭-১৮ জুলাই এবং ৪-৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে কয়েক শ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়েছিল আন্দোলন দমনের জন্য। কিন্তু ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান আহূত সভায় সেনা কর্মকর্তাদের জনগণের বিরুদ্ধে গুলি না চালানোর অবস্থান হাসিনার স্বৈরশাসন উৎখাতকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। ৫ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসিনা সেনাপ্রধানকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও সেনাবাহিনীকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ না করার নির্দেশ বহাল রাখলেন সেনাপ্রধান। অন্যদিকে, ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেন আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। সেনাবাহিনীর অবস্থান যখন জনগণ বুঝতে পারল, তখন ঢাকার চারদিক থেকে লাখো মানুষের মিছিল ছুটতে শুরু করল ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে।
সেনাপ্রধান মাত্র ৪৫ মিনিট সময় দিলেন হাসিনাকে ঢাকা থেকে পালিয়ে যেতে। বেলা আড়াইটার দিকে যখন হাসিনা ও রেহানার হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে ভারতের উদ্দেশে উড়াল দিল, তখন প্রায় ২০ লাখ মানুষের মিছিল রাজপথ ধরে শাহবাগ, গণভবন ও সংসদ ভবনের দিকে ধাবিত হলো। এই লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় জড়ো হয়ে হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও পলায়ন উদ্যাপন করল।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জিতে ক্ষমতাসীন হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট, কিন্তু ২০১০ সালে প্রদত্ত বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায়ের সুবিধা নিয়ে হাসিনা ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তের ব্যবস্থা করেছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ‘অনির্বাচিত বিধায় অসাংবিধানিক’ ঘোষিত হয়েছিল আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতির ৪-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে, কিন্তু ওই রায়ে সংসদ চাইলে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছিল। শুধু বলা হয়েছিল, বিচার বিভাগ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যবস্থাটি বাদ দেওয়া হোক, কারণ ওই ব্যবস্থা বিচার বিভাগকে দলীয়করণের কবলে নিক্ষেপ করেছে।