৫ আগস্ট সকালে সত্যিই লাখো আবাবিল ঢাকার সড়কে নেমে এসেছিল। পুরো বাংলাদেশ একটা শপথের সুতায় গাঁথা হয়েছিল। অনেকেই সেদিন পরিবারের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়েই ময়দানে নেমেছিল। সেই ময়দানে যদি কেউ বলত, ‘তুমি কে আমি কে’। সবাই একই উত্তর দিত, ‘আবু সাঈদ আর মীর মুগ্ধ’। তারপর যা হলো, তা বিশ্বের বিস্ময়। এ নিয়ে এখন অনেক গবেষণা হবে। কিন্তু এখনও নতুন বাংলাদেশের জমিন পরিষ্কার হয়নি। জমিন পরিষ্কার করতে হলে তো আগে নজর পরিষ্কার করা লাগে। যিনি শেখাবেন সেই শিক্ষকদের তো আগে নতুন করে শিখতে হবে। পুরোনো চিন্তা ও রাজনৈতিক অভ্যাস দিয়ে এই নতুন বাংলাদেশকে চেনা কঠিন, সামনে এগিয়ে নেওয়া পরের কথা।
আগস্ট মাসজুড়ে দেয়ালের লিখন বারবার বদলেছে, সাপলুডু খেলাও কম দেখা হলো না। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশ এখন আর এক সুতায় গাঁথা নেই। প্রতিটি শক্তি অন্য শক্তিকে ছাপিয়ে বড় হতে চাইছে। ইংরেজিতে যাকে বলে ফ্রাগমেন্টেশন বা খণ্ড খণ্ড হওয়া– সেটা দেখা যাচ্ছে। যে যার যার স্বল্প বা মাঝারি পাল্লার দুরবিন দিয়ে যা দেখছেন, বর্তমানের ঘাড়ে সেটাই চাপাতে চাইছেন। কেউবা আগে নয়া সংবিধান চান, কেউবা চান তড়িঘড়ি নির্বাচন। দুটি চাওয়াই ন্যায্য, কিন্তু কোনটা আগের ধাপ আর কোনটা পরে, সেটা ঠিক হয়নি। সে জন্যই বিতর্ক উঠছে আর পড়ছে। ফলে জাতীয় সংহতি কমজোরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। মাঝখান থেকে মজা নিচ্ছে ফজা ভাই গ্রুপ। রাতের ডাকাতের চেয়ে দিনের ডাকাতরা বেশি সেয়ানা।
এই ফ্রাগমেন্টেশনের একটা লক্ষণের কথা বিএনপি মহাসচিব তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ ২৮ আগস্টের সমকালের সাক্ষাৎকারে ছাপা হয়েছে। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়া সংস্কার অসম্ভব। একই সঙ্গে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বিরাজনীতিকীকরণের, মাইনাস টু ঘটনের ছায়া দেখার আশঙ্কাও জানিয়েছেন। এদিকে সরকার গঠনের ২১ দিনের মাথাতেও ১৫ বছরে রাজপথে থাকা সব দলের সঙ্গে সরকারের কথা হতে পারেনি। তবে, সমকালে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারের জেরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠকটি হয়েছে। সরকারে যারা বসেছেন তাদের অভিপ্রায় নিয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু অনভিজ্ঞতার প্রশ্নটা রয়ে যাচ্ছে, রয়ে যাচ্ছে অংশগ্রহণমূলক ইনক্লুসিভিটির কথা। তাছাড়া ১৫ বছরের জঞ্জাল এক মাসেই সাফ করা যাবে না। মারাত্মক রকমভাবে নষ্ট করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহসাই দেশ গড়ার কাজে লাগিয়ে দেওয়া যাবে– তেমন আশাও অবাস্তব। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর করতে হলে, রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সরকারের তরফেও সংস্কারের রূপরেখা এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ জানিয়ে রাখলে তো অসুবিধা নেই। সরকারের মেয়াদ নিয়েও এখনই চূড়ান্ত কথা কেউ বলতে পারবে না। সরকার যত জরুরি ও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেবে, জনগণ ততই তাদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেবে। যাতে তারা অর্থনীতি উদ্ধার এবং রাষ্ট্রের মেরামতটা ঠিকঠাক মতো চালিয়ে যেতে পারেন।