‘তৃতীয় শক্তি’ ছিল সাধারণ মানুষ

আজকের পত্রিকা হাসান মামুন প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:০১

আমার একটা ধারণা ছিল, আগের দুটি নির্বাচন যেনতেনভাবে করে ফেললেও ২০২৪ সালেরটি সরকার ইচ্ছামতো করে ফেলতে পারবে না; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক তৎপরতা দেখে এমনটা মনে হচ্ছিল। লেখালেখিও করেছি সে ধারায়। এটা কারও পক্ষ বা বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া তো নয়। এটা ন্যায্যতার প্রশ্ন। একের পর এক খারাপ নির্বাচন একটা দেশকে কোনো ভালো গন্তব্যে নিয়ে যায় না। আর এটা বুঝতে পণ্ডিত হতে হয় না। তবে ২০২৪-এর নির্বাচনটি প্রত্যাশামতো হলো না কেন, সেটা বুঝতে পণ্ডিতদের সহায়তা প্রয়োজন। তাঁরা ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা করেছেন, কেন এ নির্বাচনও সরকারের ইচ্ছামতোই হয়ে গেল।


তখন থেকে আবার মনে হচ্ছিল, নির্বাচন সেরে ফেলতে পারলেও দেশ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে কঠিন। এর একটা কারণ তৈরি হচ্ছে ভেতরে-ভেতরে; অনেক দিন ধরে। সেটা হলো, রাজনৈতিক অধিকার হরণসহ সরকারপক্ষীয়দের গা-জোয়ারি ভাব মানুষ কত দিন সহ্য করবে? আরেকটি কারণ মনে হচ্ছিল, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তো খারাপ। অর্থনীতির ছাত্র বলে; এর ইস্যুগুলো পর্যবেক্ষণ করি বলেও লক্ষ করছিলাম, এ ক্ষেত্রে সংকট ঘনীভূত হয়ে উঠছে।


কিছু সংকট আছে, যা দ্রুতই সাধারণ মানুষকে স্পর্শ করে। তেমন সংকট কিন্তু মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল। যেমন টানা মূল্যস্ফীতি। সেটা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার আবার উল্টোপাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছিল। তাতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছিল আরও। সেটা ঢাকতে আবার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছিল তথ্য জালিয়াতির! কেবলই মনে হচ্ছিল, ভুক্তভোগী মানুষ এসব ‘বদমায়েশি’ কত দিন মেনে নেবে? তারা কি কোনো একটা ইস্যুতে রাস্তায় নেমে এসে সরকারকে বিপাকে ফেলবে না?



আমার মনে হচ্ছিল, অবনতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পর্যুদস্ত মানুষ অচিরেই রাস্তায় নামবে। ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে না’ বলে যতই চিৎকার করুন ওবায়দুল কাদের—তাঁরা তো দেশকে শ্রীলঙ্কার চেয়েও খারাপ অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছিলেন। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ খেয়ে দিচ্ছিলেন তাঁরা। পরিপূর্ণ রাজনৈতিক নিয়োগ লাভকারী গভর্নররাও সেটা সামাল দিচ্ছিলেন না। ব্যাংক খাতের একটা অংশও খেয়ে দেওয়া হচ্ছিল ক্রমে। এক দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীকে নামিয়ে ব্যাংক দখল করে স্রেফ লুট করা হচ্ছিল। সঙ্গে বাড়ছিল অর্থ পাচার।


লুটের অর্থ দেশে বিনিয়োজিত হলেও কথা ছিল। গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতেও চলছিল লুটের আয়োজন। এরও প্রভাব পড়ছিল জ্বালানির বেড়ে চলা দামে। এ ধরনের সরকার সবখানেই কিছু মেগা প্রকল্প নিয়ে মানুষকে চমকে দিতে চায়। তারও আড়ালে চলে দুর্নীতির আয়োজন।


অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে জাতীয় বাজেট। চলে দুই হাতে ঋণ নিয়ে সরকার আর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা। এসবের পক্ষে নগ্ন প্রচারণা চালাতে আবার গড়ে তোলা হয় স্তাবকগোষ্ঠী। তাদের ‘দেখভালের’ ব্যবস্থাও হয়। এ জায়গাটায় হাসিনা সরকার তো ছাড়িয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে। আরেকটা বড় তফাত ছিল। শ্রীলঙ্কায় কিন্তু ছিল নির্বাচিত সরকার। অনুমোদিত শাসনের একটা জোর কিন্তু থাকে। হাসিনা সরকারের সেটাও ছিল না।



মধ্য জুলাই থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে যা ঘটে গেল, তাতে কোটা সংস্কারের দাবি উপরিভাগে থাকলেও গভীরে কিন্তু ছিল মানুষের দীর্ঘ রাজনৈতিক অধিকারহীনতা। সঙ্গে যোগ হয়েছিল, বিশেষত করোনার পর সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কশাঘাত। এটা ঠিক, কোটা সংস্কারের দাবি ঠিকমতো নিষ্পত্তি করতে পারলে এটা ঘিরে যা যা হয়েছে, তার কিছুই হতো না। তবে কী হলে কী হতো, সেটা তো নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। যা ঘটে গেছে—আমরা কেবল পারি তার কার্যকারণ খতিয়ে দেখতে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কেন দ্রুতই সরকারবিরোধী হয়ে উঠল, সেটা বুঝতেও ব্যর্থ ছিল হাসিনা সরকার। তাঁরা এর মধ্যে কেবলই ‘তৃতীয় শক্তির অনুপ্রবেশ’ দেখতে পাচ্ছিলেন।


সেটা অভিন্নকণ্ঠে প্রচার করতে কিছু মানুষকে নামিয়েও দেওয়া হয়েছিল। হ্যাঁ, ‘তৃতীয় শক্তি’ অবশ্যই ছিল। কিন্তু তারা ঠিক ‘বিএনপি-জামায়াত’ নয়। তারা মূলত উন্নয়নের সুফলবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্রুত একাত্ম হয়ে নেমে এরা প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে। সেদিন রাতেই, যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আন্দোলনরতদের উচ্ছেদ করা হয় শক্তি প্রয়োগ করে। শক্তির এই প্রয়োগ সরকার শুরু করেছিল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীদের নামিয়ে। যাত্রাবাড়ীর প্রতিরোধ ছিল তারও প্রতিক্রিয়া। এরই মধ্যে রংপুরে আবু সাঈদের অসাধারণ আত্মদানের ঘটনা বেদনাবিদ্ধ করে সর্বস্তরের বিবেকবান মানুষকে।


ফিরে তাকালেই আমরা দেখব, যাত্রাবাড়ীতে যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল—কারফিউ জারি করে, সেনাবাহিনী নামিয়েও তা দমানো যায়নি। সরকার পতনের দিনও যাত্রাবাড়ী থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত ভয়াবহ সংঘাত চলেছে পুলিশের সঙ্গে। তত দিনে এটা হয়ে উঠেছে পরিপূর্ণভাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। ঘটনার দিক থেকে এটা ছাড়িয়ে যায় সব আন্দোলনকে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়; যেমন রামপুরা-বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরে যে অসাধারণ আন্দোলন হয়েছে; তাতেও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে ক্রমে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us