ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গঠন করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মাত্র কয়েকদিন বয়সী হলেও এই সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
এই সরকারের একজন উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মধারা, কর্মপরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে গত ২২ আগস্ট দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে আইন, বিচার ও সংসদ; প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: আপনারা শপথ নিলেন ৮ আগস্ট, আজ ১৪ দিন হলো। বহু কাজ জমে আছে—এটা আপনারাও বলেছেন, আমরাও জানি। গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং লেখক-সাংবাদিক মানুষ ছিলাম। অনেক সময় থাকতো, ইচ্ছামতো জীবনযাপন করতে পারতাম। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর মনে হয়েছে, এত বেশি দুর্নীতি, অনিয়ম, অবিচার হয়ে এসেছে, এতরকমের সমস্যা! দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা করে সপ্তাহের সাত দিনই অফিস করছি—বাসায় ফিরে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছি। তারপরও মনে হচ্ছে, আরও অনেক কাজ করা দরকার।
১৭ বছর পর দেশের মানুষ বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে; মুক্ত ও তীব্র কণ্ঠে দাবি করতে পারছে; স্বপ্ন দেখতে পারছে। সবার মাঝে এত বেশি প্রত্যাশা জমে গেছে যে এর সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে যে চ্যালেঞ্জ, সেটা শারীরিকভাবে খুব কঠিন হয়ে যায়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি।
ডেইলি স্টার: সরকারের ওপর বিশাল প্রত্যাশার চাপ। এই প্রত্যাশা মেটাতে গিয়ে কী মনে হচ্ছে যে কোনো কোনো জায়গায় আপনারা হিমশিম খাচ্ছেন বা যেটা করা উচিত না এমন কিছু হয়ে যাচ্ছে?
আসিফ নজরুল: সরকার চালানোর অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই নেই। যেকোনো মানুষ যদি স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো কাজ করতে যায়, তার কিছু ভুল হবে। কিন্তু দেখতে হবে আমার ভালো কিছু করার সদিচ্ছা আছে কি না, পরিশ্রম করছি কি না, ভুল থেকে শেখার চেষ্টা করছি কি না।
আমি মনে করি, আমাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভুল থেকে শেখার চেষ্টা করছে। কোনো ভুল হলে আমাদের উপদেষ্টা পরিষদে, এমনকি ইউনূস স্যার লাঞ্চের সময়ও এসব নিয়ে আলোচনা করেন। কিছু কিছু ভুল তাৎক্ষণিকভাবে শোধরানো সম্ভব হয়, কিছু হয়তো না।
গোপনীয়তার শপথ নিয়েছি বলে সবকিছু বলতে পারব না, কিন্তু এটা নিশ্চিত করতে পারি যে ভুলগুলো সম্পর্কে আমরা সচেতন থাকার চেষ্টা করি। কতটুকু শিখতে পারছি বা কত দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারছি, সেখানে আমাদের ঘাটতি থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিদিন আমরা শিখছি এবং নিজেদের কাজের মূল্যায়ন করছি। জনগণ কী ভাবে, সেটা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি এবং আশা করি ভবিষ্যতে আরও ভালো করব।
তবে, ১৫ বছরের ব্যর্থতা-পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ১৫ দিনের শিশু সরকার কতটা মেটাতে পারবে, সেটাও সবাইকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনায় রাখতেও অনুরোধ করব।