হলিউড, বলিউডসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের চলচ্চিত্রে সেন্সর-প্রথা নেই; সার্টিফিকেশন বোর্ড রয়েছে। তবে এখনো ঢাকার সিনেমায় সেন্সর-প্রথা রয়ে গেছে। প্রচলিত সেন্সর-প্রথা বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ড করার দাবি তুলেছেন নির্মাতারা।
আশফাক নিপুন, নির্মাতা
সেন্সর বোর্ডের কথা বলছি, এটা প্রাগৈতিহাসিক প্রথা। যেটা দিয়ে সিনেমা কিংবা শিল্পচর্চাকে আটকে দেওয়া হয়। ‘শনিবার বিকেল’, ‘নমুনা’, ‘মাই বাইসাইকেল’, ‘কাঠগোলাপ’, ‘অমীমাংসিত’ কোনো কারণ ছাড়াই আটকে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক সিনেমা কাটছাঁট করা হয়। এই পুরো প্রথাই শিল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শিল্পীর কাজ হচ্ছে, উন্মুক্তভাবে শিল্পচর্চা করা।
রেদওয়ান রনি, নির্মাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, চরকি
দুনিয়ার কোনো সভ্য দেশে সেন্সর-প্রথা আর নেই। বহু আগেই এটাকে সংস্কার করে সার্টিফিকেশন বোর্ড করা হয়েছে। সিনেমা সেন্সর করতে হবে, এ বিষয়টাই তো ভুল। সেন্সর-প্রথার মাধ্যমে সিনেমাকে আটকে রেখে সিনেমাকে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে তো পারছেই না, উল্টো পিছিয়ে দিচ্ছে।
শবনম ফেরদৌসী, নির্মাতা
ছোট–খাটো কারণে চলচ্চিত্র আটকে দেওয়া হয়। আমার জানামতে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র আজও সেন্সর পায়নি। অথচ অনেক নৃশংস ও নারীকে হেয় করা চলচ্চিত্র দিব্যি মুক্তি পায় এবং মহাসমারোহে হলে চলে। ক্রিটিক্যাল কোনো ছবি, যা দর্শককে ভাবায়, সেসব আটকে দেওয়া হয়। আগামী দিনে চাই, কোনো নির্মাতাকে যেন ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ করতে না হয় তার ছবি নির্মাণের সময়। সেই সঙ্গে গ্রেডিং হলে ভালো হয়। উদার ও শিল্পবোধসম্পন্ন সেন্সর বোর্ড চাই।
কামার আহমাদ সাইমন, নির্মাতা
১৯১৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশিত ভারতবর্ষের মানুষকে নিপীড়নের জন্য এই আইনটা করা হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট। এরপর আইনটা প্রথমে পাকিস্তান, তারপর স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন নতুন নামে হাজির হয়েছেমাত্র। কিন্তু এর মৌলিক প্রস্তাবনা বদলায়নি। সেন্সর বোর্ড হলো এই লিগ্যাসির গার্ডিয়ান, কতগুলো কাজকাম নাই টাইপের শিল্পী আর বাতিল আমলাদের মাস্তানির জায়গা। শিল্প, সাহিত্য আর সিনেমার মাধ্যমে মানুষের যৌথ প্রকাশ তো সমাজের মৌলিক অধিকার—একটি স্বাধীন দেশে তো সেন্সর বোর্ড বলে কিছু থাকার কথাই ছিল না।
রায়হান রাফী, নির্মাতা
সেন্সর বোর্ডকে নির্মাতা, প্রযোজকের কাছে আতঙ্কের জায়গা হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। তারা চাইলে কোনো ছবি আটকাতে পারে, চাইলে ছেড়ে দিতে পারে। আমার অমীমাংসিত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমি শুনেছি, ছবিটি প্রথমে সেন্সর বোর্ডে দেখে ছেড়ে দিয়েছিল। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আটকে দেওয়া হয়।