বিপ্লব যেন বেহাত না হয়

আজকের পত্রিকা বিধান রিবেরু প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:২৫

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষে বিপ্লবের অর্থ দেওয়া রয়েছে প্লবন, ভাসা, নাশ, উপদ্রব, অরাজকতা, উচ্ছেদ প্রভৃতি।বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে যা ঘটে গেল তা এই সব অর্থেই বিপ্লব। চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যকে প্লাবিত করার প্রত্যয়ে তরুণেরা সব অন্যায় ও দুর্নীতির নাশ করতে চাইলেন। সেখানে বিপ্লব দমনের নামে হত্যাযজ্ঞ হলো। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে বারুদ জমা ছিল, তাতে গিয়ে পড়ল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। বিস্ফোরিত হলো গোটা সমাজ। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে উচ্ছেদ হলো স্বৈরশাসক।


কিন্তু এখানেই বিপ্লবের কাজ শেষ হয় না। মূল প্রতিপক্ষ নতি স্বীকারের পর আবির্ভূত হয় তৃতীয় পক্ষের, তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে, সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়, ভাস্কর্য ও ঐতিহাসিক ভবন বিনষ্ট করে, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আগস্টের ৫ তারিখ শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই আমরা দেখলাম আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটল দেশে। রাতে ডাকাত-ডাকাত রব, সাধারণ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না।


জনগণের বন্ধু দাবি করা পুলিশ, যারা কখনোই বৃহত্তর অর্থে জনগণের বন্ধু হয়ে ওঠেনি; বরং দিনে দিনে ক্ষমতার দ্বারা ব্যবহৃত হতে হতে নিজেরাই রক্তখেকোদের মতো হয়ে উঠেছিল, তারাও বিপ্লবের ভয়ে পলাতক, সেই সুযোগে সমাজের যারা ‘লুম্পেন প্রলেতারিয়েত’, তারা নেমে পড়ে ছিনতাই-রাহাজানি-চুরিতে। এসব রুখতেও তরুণসমাজের এগিয়ে আসতে হলো। রাতে মন্দির ও পাড়া-মহল্লা পাহারা, আর দিনে রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ।



লুট হয়ে যাওয়া সংসদ ভবন ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সাফাই করার কাজ। অতএব, বিপ্লবকে তাই দীর্ঘজীবী হতেই হয়। নয়তো এক মন্দকে বিদায় করার পর হাজারো মন্দ অপেক্ষা করে সেই শূন্যস্থান পূরণের। বিপ্লবের দায়িত্ব—যতটুকু পারা যায়, সেই স্থানটিকে সুরক্ষিত করে, সুনীতি, সুশৃঙ্খলা ও সুকুমারবৃত্তি দিয়ে তাকে পূরণ করা। কাজটি সহজ নয়, একে মাঝপথে ছেড়ে দিলে এত আত্মোৎসর্গ বিফলে যাবে। কাজেই হালটা একটা সময় পর্যন্ত ধরে রাখতেই হয়।


কিন্তু তরুণ এই শিক্ষার্থীরা কত দিন ট্রাফিক সামলাবে, কত দিন বুড়োদের নিয়মকানুন শেখাবে, দুর্নীতিকে দূরে ঠেলে রাখবে? এটা তো তাদের কাজ নয়। যেহেতু আমাদের বড়রা দেশটাকে যাচ্ছেতাই করে নরকে পরিণত করেছে, তাই তারা বাধ্য হয়ে বিপ্লবটা করেছে।


ওদিকে তো লেখাপড়াটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বিপ্লব সফল করার তাগিদ, অন্যদিকে লেখাপড়া সম্পন্ন করার তাড়া। এই দুটো বিষয়কে সমন্বয় করা যায় শিক্ষার্থীদের যদি রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে সম্পৃক্ত করা যায়। এতে করে বিপ্লবের পথ থেকে তারা সরে গেল না। আবার দেশ গঠনের কাজটাও হলো।


কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বয়স অনুপাতে তিন মাস মেয়াদে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য পাঠানো যেতে পারে। সেমিস্টারপদ্ধতিতে এটি করলে তারা শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ জারি রাখতে পারবে।


পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয় করে ট্রাফিক, সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, সংসদসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং তিন মাস কাজের পর মতামতসহ সুপারিশপত্র জমা দিয়ে আসবেন। সেটা যদি যৌক্তিক হয়, তবে তা সর্বসম্মতিক্রমে প্রয়োগ করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে অসংগতি পেলে সেটা তাঁরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জানাতে পারবেন এবং অভিযোগের ভিত্তিতে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং স্বচ্ছ উপায়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব হবে। দুর্নীতি কমে যাবে। নাগরিকেরা হয়রানির শিকার কম হবেন। সর্বোপরি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে।


অনেকেই বলতে পারেন, এই কর্মসূচিকে খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে ঘোষণা করলেই তো হয়। আমি মনে করি সেটি আত্মঘাতী হবে।বিপ্লবোত্তর দেশ গড়ার কাজ কোনো বেতনভুক্ত কর্মচারীর হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সেটি বিপ্লবীদেরই করতে হয়। তারা কাজটি করবে নিজেদের আত্মার ও নৈতিকতার তাগিদে, বিপ্লবকে সফল করার লক্ষ্যে—সবচেয়ে বড় কথা, আগামীর প্রজন্মকে একটি সত্যিকারের সোনার বাংলা উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার থেকে।


এত দিন যে ‘সোনার বাংলা’র গল্প বলা হতো, সেটি পুরাকল্পীয়, মিথিক। দেশে ভোটাধিকার বলি, আর কথা বলার অধিকার, কোনোটাই ছিল না। মানুষ সামান্য কার্টুনও আঁকতে পারত না। তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার, এমনকি মেরেও ফেলা হয়েছে। আমরা কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাকের কথা ভুলে যাইনি। এমন আরও বহু উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের আবু গারিব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া, কুখ্যাত ‘আয়নাঘরে’র কাহিনি তো কেবল প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। সারা দেশে কতশত ‘আয়নাঘর’ যে আছে!

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us