কাজের দীর্ঘ তালিকা অন্তর্বর্তী সরকারের। তা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। এগুলোর কোনোটার চেয়ে কোনোটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাজার পরিস্থিতি বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার সঙ্গে অন্যগুলো না মেলানোই ভালো। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর দিনকয়েক হুট করে কিছু পণ্যের দাম কমে। ধীরে ধীরে দাম আরও কমবে বলে আশ্বাস শুনিয়েছে বিক্রেতারা। বাজার মনিটরিং করা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তারা বাজার ঘুরে দাম নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে। চেষ্টায় কিছুটা ফলও দিয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান ঘোষণা দিয়েছেন, বাজারব্যবস্থাপনার অনিয়ম ও অবৈধ সিন্ডিকেটের নথিপত্র তুলে দেওয়া হবে ছাত্রদের হাতে। শুনতে তাৎক্ষণিক সুন্দর মনে হয়েছে। কিন্তু, প্রশ্ন এসে যায়, এসব নথিপত্র এতদিন কাউকে দিয়েছিলেন তিনি? নাকি নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন? অথবা দায়িত্বশীল কাউকে দেওয়ার পর কী রেসপন্স পেয়েছিলেন? পরিষ্কার করলে তা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হতে পারত?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন ভোক্তার ডিজি। এখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছেন তিনি। অনেকদিন থেকেই এ পদে আছেন এই ডিজি। এখন বলছেন, বাজার সিন্ডিকেটের মূল হোতা করপোরেট গ্রুপ। আরও জানান, যেখানে হাত দেওয়া হচ্ছে, সেখানেই অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। এখন শিক্ষার্থীরা যেখানে হাত দেবে, সেখানে সোনা ফলবে। শুনতে এসব কথাও বড় মধুর। বাস্তবতাটা নিদারুণ। ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, মেডিসিনে সারানোর মতো নয়। একদম সার্জিক্যাল কেস। শিক্ষার্থীরা সার্জন নন। এর জন্য দরকার বৈধ সার্জন। বাজারের কারবারিরা অষ্টধাতুতে গড়া। মন্ত্রী-সচিব-ডিজি অনেককে খাওয়ানোর দীর্ঘ অভিজ্ঞ তারা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ২০১১-১২ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। গত বছরের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বোচ্চ।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে এরা কেবল মোটাতাজা হয়েছে। এদের অনেক ছা-পোনা গজিয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় একচ্ছত্র সিন্ডিকেটে তারা শরিকানা বাড়িয়েছে। গত এক বছরে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিও ১০ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়ার পেছনে ভীষণ অবদান তাদের। উচ্চমূল্যস্ফীতিতে দেশের মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের বুক মাটিতে লাগিয়ে দিতে পারার এই স্মার্ট-ক্যারিশমেটিকরা সরকারের শীর্ষ পর্যায়কেও রীতিমতো পকেটে পুরে ফেলতে পেরেছে। ৫ আগস্ট দিনের মধ্যভাগ থেকে তিনদিন কার্যত দেশ সরকারবিহীন ছিল। এ সময়টাতে অস্থিরতার সুযোগে দেশের কোথাও কোথাও বাজারে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ভিন্ন গোষ্ঠী গজিয়েছে।
এদের মোটেই বিগত সরকারের সময়ের মতো সড়কে চাঁদাবাজি, অবৈধ মজুদদারি, দালালি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অভিভাবক হয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। ডাকদোহাই বা হুমকি-ধমকি বা নিয়ন্ত্রণ নয়, দমনই করতে হবে। বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে সবচেয়ে স্বস্তিতে থাকবে দেশের মধ্যম ও নিম্নআয়ের মানুষ। দেখি না চোর বেটা কী করে সেই তামাশা দেখার অবকাশ নেই। বাজারে অবাধ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করলে মজুদদার, দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব এমনিতেও কিছুটা কমতে বাধ্য।