বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম শুরু থেকেই এই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। গত ২৮ জুলাই ভোররাতে বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি।
আন্দোলন-বিক্ষোভ ও ডিবি অফিসের অভিজ্ঞতা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন শামসুন নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম।
ডেইলি স্টার: আপনারা শুরু থেকে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু ১৪ জুলাই রাতে শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর থেকে আপনারা বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিও যোগ করেন। মধ্যরাতে মেয়েদের হল থেকে হাজারো শিক্ষার্থী বের হয়ে বিক্ষোভ করেছিল। সেদিন আসলে কী ঘটেছিল?
নুসরাত: গত ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির বাসভবনে স্মারকলিপি জমা দিয়ে ফেরার পর দেখলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু আপত্তিজনক শব্দ ব্যবহার করেছেন। তার মধ্যে একটা ছিল রাজাকার। এই শব্দটা আসলে এতটাই গায়ে লেগে যায়। মানে বাংলাদেশে শুধু মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকার, এই দুই গোষ্ঠীর মানুষ আছে? সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব কই? আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মায়নি, তাহলে আমি রাজাকারের সন্তান কীভাবে হলাম? উনার বক্তব্য আমাদের ক্ষুব্ধ করে। তখন আমরা খবর পাই যে হলপাড়া, মানে আমাদের পাঁচটা হল যে এরিয়াতে আছে- জসিমউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল, বিজয় একাত্তর, সূর্যসেন সেখানে ছেলেরা স্লোগান দিচ্ছে, সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করছে। তখন মেয়েদের হলগুলাতে ক্ষোভ উঠতে শুরু করে।
আমাদের প্রথম রিঅ্যাকশনটাই ছিল এই, অপমানটাতো আমাদের সবাইকে করল, এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছেলেরা হলে মার খাবে আর আমরা মেয়েরা রাত ১০টার পরে হলের গেট বন্ধ বলে আমরা বসে থাকবো? তখন ১০টা ২০ বাজে, মাত্র হলের গেট বন্ধ হলো।
সে রাতে আমরা আসলে ভাবিনি যে হলের সব মেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে একত্রিত হয়ে বের হয়ে যাবে। মেয়েদের মত ছিল, যদি ছেলেদেরকে আটকে রাখে, তাহলে আমরা হলের তালা ভেঙে হলেও আমাদের ভাইদেরকে বের করে নিয়ে আসবো।
এরমধ্যে অন্যান্য হলের সমন্বয়কদের সাথে কথা হয়। জানতে পারি, সব হলের পরিস্থিতি এক। হল থেকে আমরা মেয়েরা যখন রাজুতে এসে জমা হচ্ছি, তখন সেখানে হাতে গোনা ১০টা ছেলেও ছিল না। ধীরে ধীরে মেয়েরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্ত্বরে যায়। তখন সাহস করে ছেলেরাও বের হয়ে আসে। পরে আমরা রাজুতে আসি। আমরা রাত ২টার দিকে আবার হলে চলে আসি। সে রাতেই মূলত পরবর্তী দিনের আন্দোলনটা আসলে কোন দিকে যাবে সেটা নির্ধারিত হয়ে যায়।
ডেইলি স্টার: এবং পরদিন কিন্তু মেয়েদের ওপর নির্মম হামলাও হয়েছে…
নুসরাত: চিরকালীন একটা স্ট্র্যাটেজি হলো, মেয়েরা মিছিলের সামনে থাকলে গায়ে হাত তোলার আগে সবাই একটু ভাবে, সে সন্ত্রাসী হোক আর যারাই হোক। কিন্তু তারা সেদিন টার্গেট করে মেয়েদের ওপরে হামলা করেছে। আমরা দুজন সামনে ছিলাম, সন্ত্রাসীরা ২০ গজ দূর থেকে, মেয়েদের দিকেই ইট পাটকেল ছোঁড়া শুরু করে। ওরা যদি চাইতো, তাহলে কিন্তু ছেলেদের মিছিল টার্গেট করতে পারতো। কিন্তু ওরা মেয়েদের মিছিলকেই টার্গেট করল। অনেক মেয়েকে নির্মমভাবে পিটিয়ে তারা আহত করেছে।