ন্যায়-অন্যায়বোধ ও নেতৃত্বের বয়স

দেশ রূপান্তর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৪

মাঝে মাঝে ভাবি, শুধু বই লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব, অন্য কিছু লিখব না। কিন্তু কেউ কেউ ফোন করে লিখতে অনুরোধ করেন, কারও কারও পোস্ট দেখে মতামত দিতে প্রলুব্ধ হই। তাই দায় এড়াতে পারি না। আর সারা জীবনই তো ন্যায়-অন্যায়বোধটা নিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। অফিস থেকে এসে প্রতি সন্ধ্যায় বিবেককে জিজ্ঞেস করেছি, আজ কোথাও ভুল করেছি কিনা? সে দায়বোধও এড়াতে পারি না।


সরকারি চাকরিতে পদসোপান (hierarchy) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত উপমহাদেশের সিভিল সার্ভিসে পদসোপান পদ্ধতি চালু হয় মার্কেন্টাইল সিভিল সার্ভিস আমলে ১৬৬৪ সালে। এ ধারাবাহিকতা কাগজে-কলমে এখনো চলমান, বাস্তবে নেই। কিছু অতি উচ্চাভিলাষী অফিসার সেটাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলছি, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের চাকুরেদের অভিভাবক হলেন- ডিসি, বিভাগীয় কমিশনার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এ ক্যাডারের চাকুরেদের অভাব-অভিযোগ শোনা, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা এবং তাদের সুরক্ষা দেওয়া উল্লিখিত অভিভাবকদের দায়। এ ক্যাডারের সদস্যরা রাজনৈতিক প্রভাবের অধীন যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু অনৈতিক উচ্চাভিলাষের মোহে কিছু অফিসার স্বেচ্ছায় রাজনৈতিক তোষামোদকে পুঁজি হিসেবে বেছে নেন। এটা ওই অফিসারদের দায়। রাজনীতিকদের একার দায় নয়। কারণ এ অফিসাররা নিজেরা সিন্ডিকেট গড়েছেন, রাজনীতিকদের কাছে গেছেন, তাদের প্রলুব্ধ করেছেন, বিনিময়ে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বড় বড় পদ লাভ করেছেন, এতে অনেক মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য অফিসার বঞ্চিত ও অপমানিত হয়েছেন।


আমাকে কয়েকজন ফোন করে অনুরোধ করেছেন, এ সমস্যার সমাধান কীভাবে হতে পারে; আমার অভিমত আমার অভিমত সর্বজনগ্রাহ্য হতে হবে, এটা আমি মনে করি না। কারণ সামাজিক বিজ্ঞানে ভিন্ন মত অনিবার্য। কারণ-


১. যেসব মেধাবী ও যোগ্য অফিসার বঞ্চিত হয়েছেন, সিনিয়রিটি লিস্ট/মেধা তালিকা দেখে, নিজ উদ্যোগে তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা উচিত। কারণ বঞ্চিতদের কেউ কেউ আবেদন করে পদোন্নতি চাইতে অপমানিত বোধ করবেন। যাদের এমন আত্মমর্যাদা বোধ রয়েছে, তাদের আমি স্যালুট জানাই। তাদের দরখাস্ত কেন দিতে হবে! জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত তালিকা ও রেকর্ড দেখে সেটা করা সরকারের দায়। জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা না গেলে অন্তবর্তী সরকারের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব হবে।


২. অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে ও নিতে হবে। নিচের কাজগুলো করে না গেলে আবার আগের অবস্থা তৈরি হবে। যেমন মৌলিক জাতীয় ইস্যুগুলোকে সমন্বিত করে একটি রাজনৈতিক দলিল তৈরি করা, এটা ভবিষ্যতে মেনে চলা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা। এতে জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও অংশীদার করা যেতে পারে। এতে এমন বিধান রাখা যেতে পারে যে, কোনো সরকার এগুলোর ব্যত্যয় ঘটালে তারা মধ্যস্থতা করতে পারবে। হয়তো কেউ প্রশ্ন করবেন, এতে আমাদের ইজ্জত যাবে। আমি মনে করি, এতে ইজ্জত বাড়বে ও জীবন বাঁচবে। এমন বিধান না রাখলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে বাগে আনা যাবে না। যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তারা এটা ছুড়ে ফেলে দেবে এবং স্বেচ্ছাচারিতা করবে, ১০-১৫ বছর পরে আবার জীবন যাবে এবং আমাদের হানাহানি দেখে বিশ্ববাসী হতবাক হবে। তখন আমরা জাতি হিসেবে ছোট হবো। তারচেয়ে মাথার ওপর জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের জুজুর ভয় থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকার সংযত আচরণ করতে বাধ্য হবে।


আমরা চাই, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা পরস্পরকে সম্মান করুন। খালেদা জিয়াকে যেভাবে কষ্ট দেওয়া হয়েছে, এটা কোনো ন্যায়-অন্যায়বোধ সম্পন্ন মানুষ করতে পারে না। এতদিন বলা হয়েছে, আইনে সুযোগ নেই। আইনে সুযোগ ছিল, এটা এখন প্রমাণিত। উচ্চ আদালত আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। আমি সবসময় উচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখনো শ্রদ্ধা বজায় রেখেই বলছি, যারা খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়েছেন, একটা ঠুনকো মামলায়, তাকে জামিন দেননি, তারা আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারবেন তো? এটা অভিযোগ নয়, এটা বিনম্র অনুসন্ধিৎসা! সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপমানজনকভাবে দেশত্যাগের ঘটনাতেও জাতি হিসেবে আমরা ছোট হয়েছি। আমাদের রাজনীতিকরা আমাদের আর কত ছোট করবেন, কষ্ট দেবেন! তারা তো আমাদের অভিভাবক। আমরা চাই, এমন বিধান তৈরি ও বাধ্যতামূলক করা হোক, যাতে তারা এবং আমরা সবাই ভালো থাকতে পারি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us