জাতীয় জীবনে আরও একটি বিভক্তিরেখা

আজকের পত্রিকা অরুণ কর্মকার প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:০০

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, তা আমাদের জাতীয় জীবনে আরও একটি বিভক্তিরেখা সৃষ্টি করে দিয়েছে। জাতীয় জীবনের প্রথম ও গভীরতম বিভক্তিরেখাটি সৃষ্টি করেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যাকাণ্ড। সেই বিভক্তিরেখার পটভূমি তৈরি করেছিল স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে হঠাৎ করে গড়ে ওঠা এবং ছড়িয়ে পড়া অতিবাম হঠকারী ও সশস্ত্র রাজনীতি। দ্বিতীয় বিভক্তিরেখাটি সৃষ্টি করেছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। তারপর এবারের বিভক্তিরেখাটি সৃষ্টি হলো।


এ তিনটি ঘটনার মধ্যবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতি ও জাতীয় জীবনে ক্ষত সৃষ্টির মতো অনেক ঘটনাই ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনার বিরূপ প্রভাবই জাতীয় জীবনে পড়েছে। তবে তার কোনোটির প্রভাবই একেবারে পথ বদলে দেওয়ার মতো সুদূরপ্রসারী হয়নি। উপরোল্লিখিত প্রথম ও দ্বিতীয় ঘটনার প্রভাব জাতীয় জীবনে মৌলিক বিভক্তিরেখার সৃষ্টি করেছে। অনুমান করা কঠিন নয় যে এবারের ঘটনায় যে বিভক্তিরেখা সৃষ্টি হলো, তার প্রভাবও ওই দুটির মতো সুদূরপ্রসারী হবে। এমনকি এই তিনটি বিভক্তিরেখা আমাদের জাতীয় জীবন থেকে কোনো দিন অপসৃত হবে কি না, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায় না।এবারের ঘটনার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ঘটনাটি ঘটেছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটির একটানা সাড়ে ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা অবস্থায়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তাদেরই সবচেয়ে ভালো জানা থাকার কথা। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং কিছু সন্ত্রাসী শক্তি কোনো অজুহাত পেলেই যে সর্বশক্তি নিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে, তা-ও তাদের অজানা নয়। তারপরও ঘটনা এত দূর গড়াল যে তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ জারি করতে হয়েছে। অথচ সেনাবাহিনী নামানো এবং কারফিউ জারি একটি গণতান্ত্রিক সরকারের আত্মরক্ষার সর্বশেষ ধাপ মনে করা হয়। সেই ধাপে পৌঁছেও রাতারাতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সেনাবাহিনী কয়েক দিন ধরেই মাঠে আছে। কারফিউও জারি আছে। এভাবে কত দিন চালাতে হবে, তা-ও বলা যায় না। তবে আশার কথা, জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসছে।


এখন সর্বত্র এবং সব মহলেই আলোচনার বিষয়—কেন এমন হলো? কী করে এত বড় ঘটনা ঘটতে পারল? সরকারের কি কোনো ভুল ছিল? এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট যুক্তিসিদ্ধ কারণ আছে যে, সরকারের ভুলের জন্যই ঘটনার এতটা বিস্তার ঘটতে পেরেছে। সরকারের প্রথম ভুল হলো, আন্দোলনকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনকারীদের আলোচনার টেবিলে না ডাকা। আমি বলছি না যে আলোচনার টেবিলে ডাকলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাদের ওপর দায় চাপত আন্দোলনকে সংঘাতময় করে তোলার। সরকারের পরের ভুল হলো—ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে নামানো। সরকারের এবং সরকারি দলের নেতাদের জানা উচিত ছিল যে ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে নেই। তাই সাধারণ ছাত্রদের আস্থাও নেই ছাত্রলীগের ওপর। দ্বিতীয়ত, ছাত্রলীগ মাঠে নামার ফলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ক্যাডার এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মাঠে নামতে সুবিধা হয়েছে।


এরপর শুরু হওয়া সংঘাত ক্রমেই এমনভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি; বরং তারাই বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। নরসিংদীতে জেলখানা ভেঙে ৯ জঙ্গিসহ আট শতাধিক কয়েদিকে নিয়ে গেল। অথচ সেখানে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিরোধ হলো না, একজন সন্ত্রাসীও সেখানে গুলি খেল না। এটা তো বিস্ময়কর ব্যাপার। জেলখানা কিংবা বিটিভির মতো রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার ভবনে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো তো সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধমূলক ঘটনা। সেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ অকার্যকর হওয়ার মানে হলো, এই আন্দোলনে কারা সম্পৃক্ত হয়ে কী কী করতে পারে, কতটা ভয়ংকর হতে পারে তারা. সে সম্পর্কে সরকারের কোনো ধারণাই ছিল না। শুধু অধিকতর প্রাণহানি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পিছু হটেছে, এই যুক্তি এ ক্ষেত্রে টেকে না।


কারা ঘটিয়েছে এসব ধ্বংসাত্মক ঘটনা। শুধু বিএনপি-জামায়াত? বিএনপি-জামায়াত তো একটা মুখস্থ বুলির মতো হয়ে গেছে। নরসিংদীর জেলখানা ভাঙার ঘটনা প্রমাণ করে, এই সব কর্মকাণ্ডের মধ্যে নৃশংস জঙ্গিরাও ছিল। জেলখানা আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তাদের সহযোগীদের ছিনিয়ে নেওয়া। এ জন্য বিএনপি-জামায়াতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ঘটনা ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। প্রতিটি সরকারি স্থাপনায়, মেট্রোরেল স্টেশনে যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তাতে জঙ্গিদের অংশগ্রহণের ছাপ স্পষ্ট। সরকার এতটা ভেবেছিল বলে মনে করার কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।


আরেকটি শক্তির প্রভাব সম্পর্কেও সরকারের বিবেচনায় ঘাটতি থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। সেই শক্তি হলো দুর্নীতিবাজদের শক্তি। আমরা ভুলে যেতে পারি না যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও শক্ত অবস্থান নেওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু নিজের দলের মধ্যে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা অনেক বছর ধরেই বলে আসছে। এটা নিয়ে দুর্নীতিবাজদের বিশেষ কোনো মাথাব্যথা ছিল না। সরকারি উচ্চ পদ আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জোরে তারা নির্দ্বিধায় দুর্নীতি করে গেছে। কিন্তু কতিপয় রাঘববোয়ালের অভাবনীয় দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার বাধ্য হয়ে হোক কিংবা সদিচ্ছা থেকেই হোক, যখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তখন সেটা তাদের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেমন ছিল, তেমনি আছেও বটে। তাদের মধ্যে একটা অশুভ যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। আবার এদের হাতও অনেক লম্বা। সরকারের দুর্বলতার বিষয়ও তারা ভালোভাবেই অবহিত। কাজেই তারা তো নিজেদের স্বার্থেই সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টায় শামিল হতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us