পুলিশের বদনাম

আজকের পত্রিকা চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৬

দুর্নীতি হয়তো দেশের সব প্রতিষ্ঠানেই আছে। কিন্তু দুর্নামটা পুলিশের ক্ষেত্রে বেশি। পুলিশের নামে কলঙ্ক দিয়ে, তাদের একটা গালি দিয়ে আমাদের দেশের মানুষ কেন জানি বিমলানন্দ লাভ করে। এর জন্য অবশ্য পুলিশও কম দায়ী নয়। পত্রিকার পাতা ওলটালেই পুলিশের অপকর্মের খবর চোখে পড়ে। এ লেখাটি লিখতে বসার আগে খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে পুলিশসংক্রান্ত দুটো খবর চোখে পড়ল।


আজকের পত্রিকার খবর হলো: বাথরুমের ওপর দিয়ে নারীর গোসলের দৃশ্য গোপনে মোবাইলে ধারণ করছিলেন এক পুলিশ সদস্য।ভিডিও করার সময় স্থানীয়রা টের পেয়ে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। পরে তাঁরা হাতেনাতে আটক করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে। ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার পৌর শহরের দক্ষিণ ধানগড়ায়। ওদিকে প্রথম আলো লিখেছে: রাজধানীর মিরপুরের একটি আবাসিক হোটেলে মাদক কারবারিকে আটকে রেখে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দিয়েছেন বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কয়েকজন সদস্য। গত ১২ মে ঘটনাটি ঘটেছে মিরপুর ২ নম্বরের বড়বাগ এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে।


এমন খবর প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়। ঘুষ-দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-হয়রানি তো মামুলি ঘটনা, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণের মতো অপরাধের সঙ্গে আমাদের দেশের পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত জড়িয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ অভিযুক্ত হচ্ছেন, সাজা ভোগ করছেন, চাকরি হারাচ্ছেন। তবে বেশির ভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। আর এসব কারণেই গোটা সমাজে পুলিশ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।


অবশ্য প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে পুলিশ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান। আমাদের সাহিত্যে, স্মৃতিকথায় তো অনাস্থার চিত্রই ছড়িয়ে রয়েছে নানাভাবে। রবীন্দ্রনাথ দিয়েই শুরু করা যাক। কলকাতার এক পুলিশ কর্মকর্তা পঞ্চানন ঘোষাল তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, লেখক হিসেবে তিনি একবার দেখা করতে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে।


পঞ্চাননবাবুর পুলিশ পরিচয় শুনে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে অপরাধজগৎ নিয়ে লিখতে বলেন এবং সেই সঙ্গে পুলিশ সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘পুলিশ যদি কারোর পা-ও জড়িয়ে ধরে তো লোকে মনে করে যে পুলিশ তার জুতো জোড়াটা সরাবার মতলব করছে।’ রবীন্দ্রনাথ পঞ্চাননবাবুকে ‘লোকের মনে করার কথা’ বলেছেন। নিজের মনেও কিন্তু পুলিশ সম্পর্কে উচ্চ ধারণা ছিল না। যে কারণে তাঁর লেখা উপন্যাস ‘গোরা’য় গরিব সন্তানের পক্ষে পিতামাতার শ্রাদ্ধ করাটা কতটা কঠিন সে প্রসঙ্গে উপমা দিতে গিয়ে টেনে আনেন পুলিশকে এবং তাদের বিদ্ধও করেন কঠোরভাবে। লেখেন, ‘যেমন ডাকাতির অপেক্ষা পুলিশ-তদন্ত গ্রামের পক্ষে গুরুতর দুর্ঘটনা, তেমনি মা-বাপের মৃত্যুর অপেক্ষা মা-বাপের শ্রাদ্ধ করাটা দুর্ভাগ্যের কারণ হইয়া ওঠে।’


বিখ্যাত লেখক সুকুমার রায় ‘ঘুষ খায় দারোগায়’ লিখে দারোগা এবং ঘুষকে সমার্থক করে দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘দুর্বুদ্ধি’ গল্পটিও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। দারোগা ললিত চক্রবর্তী এ গল্পে পাড়াগেঁয়ে নেটিভ ডাক্তারটিকে ভিটেছাড়া করে। অপরাধ? সে দারোগার মুখের ওপর তার অমানবিক আচরণ দেখে বলেছিল, ‘আপনি মানুষ, না পিশাচ?’ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মুক্তি’ গল্পের তুলসী দারোগা আবার আর এককাঠি সরেস। ছয়কে নয় করাতে ওস্তাদ এই দারোগার চরিত্রের দোষও বিলক্ষণ। সুন্দরী গ্রাম্যবধূ নিস্তারিণীর ওপর তার কুনজর পড়ে।


পুলিশ থেকে নায়ক হওয়া ধীরাজ ভট্টাচার্য তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘পুলিশের নাম শুনলেই লোকে ঘৃণায় ভ্রুকুঁচকে প্রকাশ্যে গালাগাল দিতে শুরু করে।’ আর পঞ্চানন ঘোষাল শুনিয়েছেন তাঁর এ রকমই এক অভিজ্ঞতার কথা। একবার ট্রেনে আসার সময় একটি পরিবারের সঙ্গে পঞ্চাননবাবুর ঘনিষ্ঠতা হয়। পরিবারের কর্তাটি তাঁর বালিগঞ্জের বাড়িতে পঞ্চাননবাবুকে একবার পায়ের ধুলো দিতে বলেন। এরপর হাওড়া স্টেশনে নামার পরে ভদ্রলোক বলেন, ‘আপনার সঙ্গে আলাপ করে ভালো লাগল। কিন্তু মশাই কী করেন তা জানা হলো না।’ পঞ্চাননবাবু নিজের পরিচয় দিলে ভদ্রলোক অবাক হয়ে বলেন, ‘সে কী, আপনি পুলিশ অফিসার! আমি তো ভেবেছিলাম ভদ্রলোক।’


বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রজনী’ উপন্যাসে মহাদেব দারোগার সঙ্গেও অনেক বাঙালি পাঠকের পরিচয় আছে। রজনীর বাবা হরেকৃষ্ণ দাস বাড়িতে একাকী মারা গেলে মহাদেব দারোগা দলবল নিয়ে এসে হরেকৃষ্ণ দাসের ঘরের সবকিছু হস্তগত করে। হরেকৃষ্ণ মৃত্যুকালে গোবিন্দকান্ত দত্তের কাছে কিছু অলংকার রেখে গিয়েছিলেন। মহাদেব দারোগা সে খবর জানতে পেরে তাকে ডাকিয়ে এনে সেগুলোও করায়ত্ত করেন।


হরেকৃষ্ণ দাসের কন্যা রয়েছে—এ খবরকে মহাদেব পাত্তা না দিয়ে অলংকারগুলো নিজের মেয়ের ব্যবহারের জন্য পাঠিয়ে দেয় বাড়িতে। সাহিত্যে পুলিশের এমন চরিত্রচিত্রণ নিশ্চয়ই বানানো নয়। হুতোম অনেক আগেই তাঁর নকশায় লিখেছেন, ‘পুলিশের সার্জন-দারোগা-জমাদার প্রভৃতি গরিবের যমেরা থানায় ফিরে যাচ্ছেন; সকলেরই সিকি, আধুলি পয়সা ও টাকায় ট্যাঁক ও পকেট পরিপূর্ণ।’ এ তো ঘুষের গল্প। আর অত্যাচার? একটি প্রাচীন বাংলা পত্রিকা খোলাখুলি লেখে, ‘এই সংসারে যত প্রকার অত্যাচার আছে, তন্মধ্যে বঙ্গীয় পুলিশের অত্যাচারই সর্বাপেক্ষা কঠোর, নিষ্ঠুর ও নৃশংস।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us