পৃথিবীর সব দেশেই ছোট–বড় সব চৌর্যকর্মের পেছনে এক বা একাধিক সহযোগী থাকে। যে চোর সিঁধ কাটে, তাকে সাহায্য করে পাহারাদার। গৃহস্থকে সাবধান করার বদলে চোরকে জানিয়ে দেয় কোন দরজা দিয়ে ঢুকলে মাল হাতানো সহজ হবে। ব্যাংক থেকে কোটি টাকা সরায় যে ব্যবসায়ী, তাকে সঙ্গ দেয় সেই ব্যাংকের ম্যানেজার (বা ম্যানেজিং ডিরেক্টার), মিথ্যা কাগজপত্র বৈধ করিয়ে। হাজার বিঘা জমি বেহাত হয়ে যায়, তা দেখেও দেখে না স্থানীয় প্রশাসন, সম্ভবত বখরার প্রতিশ্রুতি পেয়ে।
ইংরেজিতে এদের বলা হয় ‘এনেইবলারস’। শুধু চুরি নয়, সব ধরনের অপরাধের পেছনেই হয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ জোগায় কেউ। আবার অনেকে অপরাধের কথা জেনেও চোখ বুজে থাকে। এরা সবাই ‘এনেইবলারস’। হয়তো সঠিক অনুবাদ নয়, কিন্তু আমাদের আলোচনার সুবিধার্থে বাংলায় নাহয় এদের গাঁটকাটাই বলি।
আমেরিকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব মহাচোরদের কথা আমরা শুনেছি, তাদের একজন হলেন বার্নি মেডফ। ১৭ বছর ধরে এই ধুরন্ধর হেজ ফান্ড ম্যানেজার বিনিয়োগ করে মোটা মুনাফা দেবেন এই প্রতিশ্রুতিতে কোটি কোটি ডলার নিয়ে তা নয়ছয় করেছেন। ২০০৮ সালের দিকে জানা গেল, বিনিয়োগের নামে তার পুরোটাই ছিল জালিয়াতি। দুই-দশ টাকা নয়, মোট ৫৬ বিলিয়ন ডলার তিনি বেহাত করেছেন।
যখন কেঁচো খোঁজা শুরু হলো, দেখা গেল তার দুষ্কর্মের কথা অন্য অনেকে শুধু জানতই না, জেনেশুনে তাঁকে সঙ্গও দিয়েছে। এদের মধ্যে তাঁর পরিবারের সদস্যরা তো রয়েছেই, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থার কর্তাব্যক্তি এবং সরকারি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ব্যবস্থাপকেরাও জড়িত। নকল কাগজপত্র বানিয়ে বিনিয়োগকারীদের বোকা বানানোর কাজে এদের কেউ কেউ সরাসরি হাত লাগিয়েছে।
এদের প্রত্যেককেই আমরা গাঁটকাটা বলতে পারি। বেশ কয়েক বছর জেলের ঘানি টানার পর ২০২১ সালে ৮২ বছর বয়সে মেডফের মৃত্যু হয়। তাঁর এক পুত্র মনের দুঃখে আত্মহত্যা করেন, কিন্তু অধিকাংশ গাঁটকাটাই গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়।
আরও সাম্প্রতিক, আরও প্রাসঙ্গিক এক অপরাধী ও তাঁর সঙ্গী গাঁটকাটাদের কথা আমি বলতে চাই। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাঁর এখন জেলে থাকার কথা।