দেশের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জুবিলি উদযাপন উপলক্ষে ২৩ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বারবার আঘাত এসেছে কিন্তু আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন, জনগণের অধিকার আদায়ের সংগঠন, জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করার সংগঠন। কাজেই বারবার আঘাত এলেও এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখি যেমন পুড়িয়ে ফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে ওঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবে জেগে উঠেছে।
দলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দলকে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়েছে। বারবার এ দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছিল। সেই আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ থেকে শুরু... বারবার আঘাত এসেছে। খুব বেশি দিনের কথা নয়। ২০০৭ সালে চেষ্টা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে কিংস পার্টি গড়ে তুলবে। সেটাও সফল হয়নি। তার কারণ আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ, তৃণমূলের মানুষ, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী, মুজিব আদর্শের সৈনিক। এ সৈনিকেরা কখনো পরাজয় মানে না, মাথা নত করে না।
আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাওয়া নেতাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হয়তো কখনো কখনো কিছু নেতা ভুল করেছেন। কেউ কেউ মনে করেছেন আওয়ামী লীগে থাকলে তাঁরাই বড় নেতা, দলের চেয়েও নিজেকে বড় মনে করে দল ছেড়েছেন। দল ছেড়ে অন্য দল করেছেন; কিন্তু ভুল করেছেন। কেন? আপনারা দেখেন, আকাশে মিটিমিটি তাঁরা জ্বলে। তাঁরা আলোকিত হয় সূর্যের দ্বারা। যেসব নেতা ভুল করেছিলেন, তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন বলেই আলোকিত ছিলেন। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর ওই তাঁরা আর জ্বলেনি। কেউ ভুল বুঝে হয়তো ফিরে এসেছেন, আমরা নিয়েছি।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০৪১, ২১০০ অনেক বয়স হয়েছে, ততদিন হয়তো বেঁচে থাকব না। কিন্তু আজকে যারা নবীন, যারা আমার স্মার্ট বাংলাদেশের মূল সৈনিক হবে। আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলব, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলে, এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্লাটিনাম জুবিলিতে এটিই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিক বিভিন্ন দলের নেতা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন বিদেশি মিশনের কূটনীতিক। তবে বিএনপির ৬ জন নেতাকেও অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছিল। তারা কেউ আমন্ত্রণ রক্ষা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিকৃষ্ট রূপটি এরমধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আড়াই-তিনশ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন যে দলের যাত্রা শুরু হয়েছিল, প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর অতিক্রম করে সেটা এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রথম কমিটিতে শেখ মুজিব ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিব ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।