বন সম্প্রসারণের জন্য স্থানীয় জনগণকে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে দেশে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি চালু হয়। গাছ বড় হওয়ার পর সেগুলো কেটে বিক্রি করার পর টাকা ভাগাভাগি করে নেয় বন বিভাগ ও উপকারভোগীরা। এ উপকারভোগীরা মূলত স্থানীয় দরিদ্র জনগণ। বনায়নের গাছ পরিচর্যা তাঁরাই করেন মূলত। গাছ কাটার টাকায় তাঁদের যেমন জীবনমান উন্নত হয়, অন্যদিকে সেই টাকায় বন বিভাগ আরও গাছ লাগাতে পারে। তবে শেরপুরের শ্রীবরদীতে এ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেক উপকারভোগী। টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে এক বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ীতে ২০০৩-০৪ সালে বালিজুড়ী রেঞ্জ এলাকার গারো পাহাড়ে ১০০টি বাগান করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ সালে ৬৩ জন অংশীদারকে তাঁদের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ৩৭ জন এখনো টাকা পাননি। তাঁদের পাওনা টাকার পরিমাণ প্রায় ২৭ লাখ। রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও অংশীদারেরা তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাননি। এক যুগের বেশি সময় ধরে বাগান পরিচর্যাকারী এসব উপকারভোগীর একেকজনের পাওনা কয়েক লাখ টাকা।
সামাজিক বনায়নের এসব অংশীদার দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের পাওনা টাকার জন্য বন বিভাগে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু বন বিভাগ তাঁদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। অভিযোগ উঠেছে, বালিজুড়ী রেঞ্জের সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সামাজিক বনায়ন থেকে তাঁর আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ ৯ কোটি। এরই মধ্যে তাঁকে বরখাস্ত করেছে বন বিভাগ।
ভুক্তভোগী ময়নাল হকের বক্তব্য, ‘চার ছেলেমেয়ে নিয়া আমার সংসার। এখন টাকা না পাওয়ায় আমি দুশ্চিন্তায় আছি। টাকার অভাবে আমি আমার জরাজীর্ণ ঘর মেরামত করতে পারছি না।’
শেরপুরের বন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রবিউল ইসলামের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দুটি কমিটি তদন্ত করে দেখছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে রবিউলের ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এরপর আইনানুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব অংশীদার টাকা পাননি, তাঁদের টাকা পরিশোধের বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।