চুরি করা গরুতে কোরবানি হয় না

জাগো নিউজ ২৪ প্রভাষ আমিন প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২৪, ১৫:০৮

তখন আমি ক্লাশ সেভেনে পড়ি। একবার কোরবানির ঈদের আগে স্কুলের ধর্ম শিক্ষক ক্লাশে বললেন, কোরবানি দিলে তো সওয়াব হয়। আমরা সবাই বললাম, জ্বী স্যার। এরপর স্যার বললেন, গরু চুরি করলে তো গুনাহ হয়। আমরা আরো জোরে বললাম, জ্বী স্যার। এরপর স্যার বললেন, কেউ যদি একটি গরু চুরি করে কোরবানি দেয় তাহলে কী হবে। চুরি করার গুনাহ আর কোরবানি করার সওয়াব কাটাকাটি হয়ে যাবে। মাঝখানে মাংসটা লাভ থাকবে।


স্যারের যুক্তি শুনে আমরা পাজলড হয়ে গেলাম। স্যারের যুক্তিও ফেলনা নয়। অঙ্কের হিসাবে মাংসটা তো বোনাস। আবার চুরির বিষয়টাও মানতে মনে সায় দিচ্ছিল না। গোটা ক্লাশ চুপ। হঠাৎ স্যার হুঙ্কার দিলেন, আরে গাধার দল। চুরি করা গরু দিয়ে কোরবানি হয় না। তাই সওয়াব পাওয়ার আশা নেই। চুরি করার সাথে সাথেই সব শেষ। একজন চোর কখনো সওয়াব পাবে না। আসল কথা হলো, নিয়ত। তোর নিয়তই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে আর কোনোকিছুতেই কোনো লাভ নেই।


ধর্ম স্যার ছেলেবেলাতেই পাপ-পূণ্যের হিসাবটা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন জানি মনে হয়, সব স্কুলের ধর্ম স্যার বোধহয় এই শিক্ষাটা দিতে পারেননি। চারদিকে দেখি ধর্ম নিয়ে অনেক হিসাব-নিকাশ। সওয়াব-গুনাহে কাটাকাটি করে মাংস পাওয়ার লোভ। আল্লাহর সাথেও আমরা চালাকি করি।


মুসলমানদের পাঁচ ফরজের একটি হজ। সামর্থ্যবান সব মুসলমানকে হজ করতেই হবে। শুধু আর্থিক সামর্থ্য নয়, হজের সাথে শারীরিক সামর্থ্যেরও একটা বিষয় আছে। হজ একটা কষ্টকর ইবাদত। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যারা হজ করতে যান, তাদের অধিকাংশই বয়স্ক। সবার নিয়ত থাকে, সারাজীবন ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি সব করে টাকা কামাবেন; আয়েশ করে জীবনযাপন করবেন। আর শেষ বয়সে হজ করে এসে সাধু সাজবেন। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন পবিত্র কাবা ঘরে স্থাপিত হজরে আসওয়াদে একবার চুমু খেতে পারলেই সারাজীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। হজ থেকে এসে আর কোনো পাপ কাজ করবেন না। যারা দীর্ঘায়ু পান, তারা হজ করে এসে অন্তত ৪০ দিন কোনো পাপ কাজ করেন না। তারপর আবার শুরু করেন। তার নিয়ত থাকে, আবার একবার হজ করে নেবেন। এসব চতুর মুসলমানের কাছে হজ হলো পাপ ধোয়ার ওয়াশিং মেশিন।


আমার এক বন্ধু নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন। তো একবার পার্টিতে দেখি তিনি শুধু জুস খাচ্ছেন। কেন, জানতে চাইতেই বললেন, ওমরাহ করে এসেছি ৩৮ দিন হলো। আর দুইদিন বাকি আছে। তারপর আবার পার্টি করবো। এই ধূর্ত মুসলমানেরা কি জানেন না, আল্লাহ অন্তর্যামী। তিনি সব দেখেন, সব জানেন, সব বোঝেন। ছেলেবেলায় রোজা রেখে আমাদের কেউ কেউ গোসলের সময় পুকুরে নেমে ডুব দিয়ে পানি খেয়ে নিতো। ধারণা ছিল, আল্লাহ দেখতে পায়নি। সেই ছেলেমানুষি ভাবনাটা আমাদের বড় মানুষদের মধ্যেও দেখি। সারাজীবন চুরি করে, শেষ বয়সে হজ করে পুতপবিত্র হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বুঝি আল্লাহ দেখেন না? এই চালাকিটা বুঝি আল্লাহ ধরতে পারেন না। অনেকে হজ করার জন্য টাকা আলাদা করে রাখেন।


শুধু সৎ পথে উপার্জিত অর্থই হজ করার জন্য রাখেন। পাশাপাশি অসৎ পয়সায় আয়েশী জীবনযাপন করেন । এক ফোটা চনা যেমন এক মন দুধ নষ্ট করার যথেষ্ট। তেমনি অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ আপনার সকল অর্থকেই অবৈধ করে ফেলবে। সে অর্থে আপনার কোরবানি, হজ কিছুই হবে না, হওয়ার কথা নয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us