ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ প্রভৃতি স্থানীয় সরকার সংস্থা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত এবং ওই সংস্থাগুলোর নিজস্ব অফিস বা দপ্তর এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। অফিস যেহেতু রয়েছে, সেই অফিসগুলোর জন্য একটি নির্ধারিত অফিস সময়সূচি মানা আবশ্যক।
দুঃখজনক হলেও এটি অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই যে এসব অফিসের প্রধান কর্তাব্যক্তিরা বিশেষত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মেয়রেরা প্রায়ই দেশের সরকারি অফিস সময় মেনে চলেন না। হয়তো আরও ওপরের স্তরের জনপ্রতিনিধি জাতীয় সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন উপস্থিতি-অনুপস্থিতির খতিয়ান দেখলে তাঁদের অবস্থাও বোঝা যাবে।
যেসব জনপ্রতিনিধি নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের নিজস্ব দপ্তর রয়েছে, সেসব দপ্তরের নির্ধারিত সময়সূচি পালন করা জনশৃঙ্খলার অংশ। সে সময়সূচির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাতে সে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হয় এবং জনগণের সেবা প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এ অফিস সময় মেনে চলার বিষয়টি দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে সব মন্ত্রিপরিষদ সদস্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
বিষয়টি আলোচনার জন্য প্রাসঙ্গিক হলো এ কারণে যে সম্প্রতি (১৫ মে ২৪) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি সার্কুলারের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সরকার নির্ধারিত অফিস সময়ে পরিষদে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনাটির মাধ্যমে বিরাজিত একটি সমস্যাকে স্বীকার করা হলেও এ পরিপত্রটি প্রতিপালনে এবং বাস্তবায়নের পথে রয়েছে বিস্তর সমস্যা। সে সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে অফিস সময় মেনে চলার বিধান কার্যকর করা দুরূহ।
এ বিষয়ে প্রথম পর্যবেক্ষণ হতে পারে, শুধু ইউনিয়ন পরিষদ নয়; জনপ্রতিনিধিত্বশীল সব প্রতিষ্ঠানে এ সমস্যা রয়েছে, সরকার সব প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি একক ও সাধারণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দ্বিতীয়ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাজের প্রকৃতি, চরিত্র ও প্রথা-পদ্ধতি এক নয়, তাই সাধারণ নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম সব সময়ই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তার অবকাশ রয়েছে। তৃতীয়ত সরকারি আদেশ মানার জন্য কিছু ইতিবাচক প্রণোদনা ও অমান্যের জন্য শাস্তিমূলক প্রতিবিধান থাকে। এখানে তার কোনোটাই নেই। চতুর্থত প্রশাসনিক ব্যবস্থাও যথার্থ নয়।