ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছিলেন। এ সংবাদ জানার পর ইরানসহ মুসলিম বিশ্বে প্রেসিডেন্ট রাইসির ভক্ত-অনুরক্তরা আশা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি হয়তো প্রাণে বেঁচে যাবেন। ইরান সরকার দেশবাসীকে তার জন্য দোয়া করার আহ্বান জানান। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইরানবাসী কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছে এবং একটি মিরাকলের অপেক্ষায় ছিল। বাংলাদেশের একটি দৈনিক প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর লিখেছে, ‘কাঁদছে ইরান! প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু মুসলিম বিশ্বসহ পৃথিবীর ন্যায়বিচারকামী মানুষদের দারুণভাবে মর্মাহত করেছে। এ যেন অতি আপনজনকে হারানো।’
গত রোববার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরও রোববার রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত দুর্ঘটনাকবলিতদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। সেখানে ভারী বৃষ্টি ও ঘনকুয়াশার কারণে ৫ মিটারের বেশি দূরত্বে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। হেলিকপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এ প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইরানের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে যে খবর আসছে, তা খুব উদ্বেগজনক। ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় উদ্ধার তৎপরতার পর সোমবার সকালে হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইরান সরকার।
প্রতিবেশী দেশ আজারবাইজানের সীমান্ত এলাকায় একটি যৌথ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করে গত রোববার দুপুরে হেলিকপ্টারে করে ফিরছিলেন রাইসি। সেখান থেকে ১৭০ কিমি. দূরের ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে যাত্রা করেন প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সঙ্গীরা। ৫৮ কিলোমিটার যাওয়ার পর পর্বতঘেরা ভারজাগান এলাকায় বিধ্বস্ত হয় হেলিকপ্টারটি। ওই বহরে আরও দুটি হেলিকপ্টার ছিল। তবে সেগুলো নিরাপদে অবতরণ করে। প্রশ্ন জাগে, একই বহরের দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে ফিরলেও প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহন করা হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হলো কেন? দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বলা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অপর দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদ থাকায় প্রশ্ন জাগা সংগত। প্রেসিডেন্ট রাইসি যে হেলিকপ্টারে ছিলেন সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত বেল হেলিকপ্টার। ১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লবের আগে এ হেলিকপ্টারটি পেয়েছিল তৎকালীন রেজা শাহ পাহলভির সরকার। রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে তখন ইরানের ইসলামি বিপ্লবী অভ্যুত্থান হয়েছিল। সরল হিসাবে হেলিকপ্টারটির বয়স ৪৫-৪৬ বছর। এত বছর ধরে টিকে থাকা হেলিকপ্টারটির নিরাপদ সার্ভিস দেওয়ার কথা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর স্যাংশান বা অবরোধ আরোপ করার পর ইরানের পক্ষে হেলিকপ্টারের যন্ত্রাংশ আমদানি করা সম্ভব হচ্ছিল না। এতগুলো বছরে এ হেলিকপ্টারগুলো উড্ডয়ন-অযোগ্য হয়ে পড়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।