জনগণের ভোটবিমুখতা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত

যুগান্তর মো. আবদুল লতিফ মন্ডল প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২৪, ১২:২৬

গত ৮ মে দেশে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ওইদিন ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ‘ভোটের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে হতে পারে।’ ৯ মে সাংবাদিকদের ব্রিফিং প্রদানকালে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে ‘৩৬.১ শতাংশ ভোট পড়েছে।’ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, দেড় দশকের মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের এ হার সর্বনিম্ন। অবশ্য ভোটার উপস্থিতির এ হার সাম্প্রতিককালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির নিম্নহারের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ নয়। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে, তা আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।


কোনো নির্বাচনে, তা জাতীয় বা স্থানীয় যে পর্যায়েই অনুষ্ঠিত হোক, ভোটার উপস্থিতি নির্ভর করে মূলত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের ওপর। দেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে চারটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ গৌরবের অধিকারী। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৭৫টি দল-জোট এবং ৪২৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৫৫.৪ শতাংশ। মোট যে ভোট পড়ে, তার ৩০.৮১ ও ৩০.০৮ শতাংশ পায় যথাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ মোট ভোটের ৬১ শতাংশ পায় এ দুটি দল। ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৮১টি দল-জোট এবং ২৮১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৭৫.৬০ শতাংশ। মোট যে ভোট পড়ে, তার ৩৭.৪৪ ও ৩৩.৬১ শতাংশ পায় যথাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। অর্থাৎ মোট ভোটের ৭১ শতাংশ পায় এ দুটি দল। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৫৪টি জোট এবং ৪৬৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশগ্রহণ করে। এ নির্বাচনে ভোট গৃহীত হয় ৭৪.৯৭ শতাংশ। মোট ভোটের ৪০.৯৭ ও ৪০.১৩ শতাংশ পায় যথাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ মোট ভোটের ৮১ শতাংশের বেশি পায় এ দুটি দল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৮৭.১৩ শতাংশ। মোট যে ভোট পড়ে, তার ৪৮.০৪ ও ৩২.৫০ শতাংশ পায় যথাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। অর্থাৎ মোট ভোটের ৮০ শতাংশের বেশি পায় এ দুটি দল।


উপর্যুক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-এ দুটি দলের যে কোনো একটি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার যে ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে, তা বলাই বাহুল্য। তাই-ই ঘটেছিল ষষ্ঠ, দশম ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বিএনপির শাসনামলে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ বেশ কিছুসংখ্যক দল অংশগ্রহণ না করায় ওই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ২১ শতাংশ। অনুরূপভাবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বর্জন করে। ইসির দাবি অনুযায়ী, এ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৯ শতাংশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে-আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আওয়ামী লীগের এমন আশ্বাসে বিএনপি ও অন্যসব বিরোধী দল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও সে নির্বাচন মোটেই অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। এ নির্বাচনে নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ছিল-নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্ধারিত দিনের আগের রাতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ব্যালট বাক্সে ভোট প্রদান। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এ নির্বাচন দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়ে আসছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘দ্য ২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসাবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম হয়েছে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ দেড় ডজনের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বর্জন করে। এ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে সরকারি দল নিজ দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলের সদস্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেয়। ‘ডামি’ নির্বাচন হিসাবে পরিচিতি পাওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ১১ আসন বাদে বাকি সব আসনে শাসক দল আওয়ামী লীগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জয়লাভ করে। এ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড’ মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে পারেনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের চর্চা নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলেও নির্বাচনে তা সীমিত ছিল। এ নির্বাচনে ৪১.৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে ইসি দাবি করেছে। তবে অনেকে ভোট পড়ার এ হার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us