যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন যখন এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের পক্ষ নিলেন, তখন আমার মনে কেবল একটাই প্রশ্ন জাগলো, তারা মানুষের পক্ষে নেই, তারা ইসরায়েল নামের হত্যাযজ্ঞকারীর পক্ষে?
সম্প্রতি যখন মার্কিনি প্রশাসন এটা বললো যে গাজায় বা রাফাতে মার্কিনি অস্ত্র ব্যবহারে ইসরায়েল ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার’ লঙ্ঘন করছে কি না, তা তারা বোঝার চেষ্টা করছেন। একটি রিপোর্ট বলছে মার্কিনি পররাষ্ট্র দফতর এ- ব্যাপারে ৪৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করে কংগ্রেসে জমা দিয়েছে।
ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষরিত একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্মারক (এনএসএম–২০) অনুযায়ী পর্যালোচনাটি করা হয়। স্মারকটি বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ, ব্যবহার এবং জবাবদিহিসংক্রান্ত। অর্থাৎ অন্য কোনো দেশ যখন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করবে, তখন তাদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে। অস্ত্রগুলো সেসব দেশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে কংগ্রেসে অবহিত করতে হয়। ( প্র/আ- ১২ মে, ২৪)
বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া এই বিষয়টি ইসরায়েলের ওপর সব থেকে কঠিন পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করা হয়েছে বা হচ্ছে। কেন? কারণ প্রতিবেদনটিতে ইসরায়েল যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে সেখানকার হামাস যোদ্ধাদের নির্মূলের নামে, সেটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের শর্তগুলো মেনে করছে না বলে মনে হয়েছে বাইডেন প্রশাসনের। কংগ্রেসে এই প্রতিবেদনটির চুলচেরা বিচার ও বিশ্লেষণ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এবং হাউজ অব রিপ্রেজনটিভে এবং উচ্চকক্ষ সিনেটে ভোটাভুটি হতে পারে, যদি মতবিরোধ তীব্র হয়। তখন ভোটে যে পক্ষ জিতবে, জো বাইডেন প্রশাসন সেদিকেই যেতে বাধ্য হবে।
ভয়টা এখানেই যে হাউজ ও সিনেটে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে দলীয় সংহতি সত্ত্বেও, ন্যায়ের প্রশ্নে অনেক বিবেকবান সদস্যই দলের নীতি-আদর্শের বাইরে বিশেষ জাতীয় ব্যাপারে ভোট দিতে পারেন। তাতে তার বা তাদের সদস্যপদ যাবে না। বরং দলীয় নেতারা এটাই বুঝবেন যে তাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। তারা সেখান থেকে কিছুটা হলেও শিক্ষা নেবে।
এ কারণেই ইসরায়েলের ভয়। যদি তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ইতোমধ্যেই তাহলে আর মার্কিনি অস্ত্র সরঞ্জাম পাবে না। ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনে। আর সেই অস্ত্রই যে গাজা ও রাফাতে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে ব্যবহার হচ্ছে বলে যে সন্দেহ করছে জো বাইডেন প্রশাসন, সেটাই এখন বিচার করে দেখা হবে। যদি মার্কিনি অস্ত্র পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কি করবে ইসরায়েল?
ইতোমধ্যে একটি চালান বন্ধ হয়ে গেছে, যা ইসরায়েলে যাচ্ছিল। এ ব্যাপারে ইসরায়েলি নেতা নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা নিজেদের শক্তি নিজেরাই অর্জন করতে সক্ষম। তার এ কথার মানে হচ্ছে, ইতোমধ্যে অস্ত্র উৎপাদনে ইসরায়েল স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তারা নিজেদের রক্ষায় যথেষ্ট উদ্যমী। রেফারেন্স হিসেবে তারা বলেছে ১৯৬৮ সালের যুদ্ধে তাদের অস্ত্রে ঘাটতি ছিল, কিন্তু মনোবলের জোরে ও নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছিল।