একাত্তরের ১৩ এপ্রিল। পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা চালায় রাজশাহীর চারঘাট থানাপাড়ায়, সারদা পুলিশ একাডেমির ভেতরে। প্রায় হাজারের ওপর নিরীহ-নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিল তারা।
নয় মাস আগের কথা। এ গণহত্যা নিয়ে সরেজমিন গবেষণার আহবান জানায় স্নেহভাজন সোহরাব হোসেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সোহরাব তখন ইউএনও হিসেবে চারঘাট উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন। এ গণহত্যার দিনে কী ঘটেছিল? তা প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখের দেখার চেষ্টাটা ছিল শুরু থেকেই। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে নানাভাবে পাশে ছিলেন চারঘাটে গরিবের ডাক্তারখ্যাত চিকিৎসক আতিকুল হক।
ওই গণহত্যা থেকে বেঁচে ফিরে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বাগ্রে নাম আসে অধ্যাপক ড. জিন্নাতুল আলম জিন্নার। খুব কাছ থেকে প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছেন তিনি। লাশ টেনেছেন, শহীদদের রক্তে নিজের শরীর ভিজিয়েছিলেন। তাঁকেও হত্যা করা হতো। কিন্তু দৈব্যক্রমেই বেঁচে যান তিনি। জিন্নাতুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধনটি তৈরি করে দেন সাংবাদিক ও লেখক মাসকাওয়াথ আহসান।
এভাবে সরেজমিন প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে আলাপচারিতা ও নানা-তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে জানার চেষ্টা চলে থানাপাড়া হত্যাযজ্ঞের ইতিহাসটি। যা একাত্তরে পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক জেনোসাইড বা গণহত্যার প্রামাণ্য হিসেবেই উঠে আসে। পাশাপাশি স্বাধীনতা লাভের পর শহীদ পরিবারগুলোর টিকে থাকার লড়াইয়ের করুণ ও কষ্টের অনুভূতিগুলোও আমাদেরকে প্রবলভাবে স্পর্শ করে। শহীদদের তালিকা না হওয়া এবং শহীদ পরিবারগুলোর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশকে আজও দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এলএমজি দিয়ে নৃশংসভাবে মানুষগুলোকে মারে ওরা
একাত্তরে অধ্যাপক জিন্নাতুল আলম জিন্না ছিলেন অনার্স ফোর্থ ইয়ারের ছাত্র। পুলিশ একাডেমির সঙ্গেই তার বাড়ি। থানাপাড়া গণহত্যার স্মৃতি তার বুকের ভেতর জমে আছে কষ্টের মেঘ হয়ে। রক্তাক্ত ওই দিনটির কথা তিনি বললেন যেভাবে, “ওইদিন পাকিস্তানি আর্মিরা চারদিক থেকে এমনভাবে আসছিল যে সারদা পুলিশ একাডেমির পদ্মা নদীর দিকটাতেই পালানোর একমাত্র পথ মনে করে সবাই। অনেকেই ভেবেছে সাঁতার দিয়ে ওপারে ইন্ডিয়াতে চলে যাবে। ফলে আশপাশের গ্রামগুলো থেকেও বহু মানুষ আসে। পাশেই ছিল ক্যাডেট কলেজ। সেখানকার লোকজন আর সারদা পুলিশ একাডেমির পুলিশরাও সিভিল ড্রেসে আসে সেখানে। আনুমানিক হাজার দুয়েক মানুষ জড়ো হয় ওই চরে।