পুলিশের ওপর এই আস্থাহীনতা নিশ্চয়ই কার্য-কারণ সম্পর্কের বাইরে নয়। খুলনাঞ্চলেরই তো খবর যে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের অভিযোগে পুলিশের তিন সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। (প্রথম আলো, ১৪ জানুয়ারি)। পুলিশের পোশাক পরে প্রতারণার দায়ে প্রতারক-গ্রেফতার হামেশাই ঘটছে। পুলিশের পোশাক ভাড়া খাটে এমন খবর শুনেছি; খবরটা যে উড়ো নয় তার প্রমাণ তো এই খবর থেকে পাওয়া গেল যাতে বলা হচ্ছে পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম বিক্রিতে 'কঠোর নজরদারি' জারি করা হয়েছে। এখন থেকে পুলিশি বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্য কেউ ওইসব জিনিস কিনতে পারবে না।
অর্থাৎ কেবল ভাড়া দেওয়াই নয়, কেনাবেচাও চলছিল। পুলিশ বাহিনীর লোকেরা নিজেরাই যখন অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হন, তখন তো নতুন করে নিশ্চিত হতে হয় যে ভরসায় জায়গাজমি দেশের ফসলী ভূমির মতোই সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। অন্য অনেক খবরের মতোই এই খবরটির অন্তর্গত বার্তা বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। খবরটি এই রকমের: পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করে নিজের স্ত্রীসহ তিনজনকে হত্যা করেছে। আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। মৃত্যুদণ্ড দিয়েই সন্তুষ্ট থাকেনি, এক লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছে। কিন্তু আসামি তো দেশেই নেই; হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে সে উধাও হয়ে গেছে। (প্রথম আলো, ১২ ফেব্রুয়ারি)।
অন্য এক খবরে জানা গেল পুলিশের এক অফিসারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা রুজু করেছেন একজন মহিলা সরকারি কর্মচারী, শিশু ও নারী নির্যাতন আদালতে। এর আগে ওই ভদ্রলোকের স্ত্রীও তার বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য অত্যাচারের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, যে জন্য তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। মানছি যে এগুলো ব্যতিক্রম; কিন্তু ব্যতিক্রম কেন ঘটবে, বিশেষ করে সেই বাহিনীতে যাদের দায়িত্ব মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া?
নানা ধরনের হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকে। যশোরে ওয়ার্ড যুবলীগের নেতাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। নেত্রকোণায় বাবার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ঝগড়ায় শিশু নিহত হয়। কৃষকের ওপর ভূমিদস্যুদের হামলা চলে। ধামরাইয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার পুকুরে মাছ মারা যায় বিষপ্রয়োগে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে মাদকের শত কোটি টাকার চালান আসা-যাওয়া করে ঢাকা বিমান বন্দর দিয়ে। বারো মাসে আত্মহত্যা করে ৫১৩ জন, যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু (প্রথম আলো, ২৮ জানুয়ারি) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল খবর দেয় দুর্নীতির ব্যাপকতায় ও গভীরতায় এক বছরে দুই ধাপ নেমেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ বলে গণতন্ত্রের বিবেচনাতেও নেমেছে বাংলাদেশ, দুই ধাপ। (ডেইলি স্টার, ১৯ ফেব্রুয়ারি)।
পিরোজপুরে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠানে কে প্রধান অতিথি হবেন তা নিয়ে বিরোধে নিহত হন সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান; অভিযুক্ত হন ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান, যিনি জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক, নীলফামারীতে ঋণ পরিশোধ করতে না-পারার হতাশা থেকে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করে এক ব্যক্তি। ১৪ বছর বয়স্ক মেয়েদের বিবাহ এক বছরে বেড়েছে ৬.৪৬ শতাংশ (ঐ)। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে ভাগনেকে। রাজবাড়িতে একটি পরিবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল দুই ছেলের বিয়ের সম্বর্ধনার; সড়ক দুর্ঘটনায় পাত্রদের মৃত্যুতে অনুষ্ঠানটি শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে কুলখানিতে (ডেইলি স্টার, ৩ ফেব্রুয়ারি)। ওদিকে সরকারি পরিসংখ্যান ব্যুরোই খবর দিচ্ছে যে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি চার বছরের ভেতর সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গিয়েছিল। (ডেইলি স্টার, ৩ ফেব্রুয়ারি)।