সব অভিজ্ঞতাকে মিথ্যা প্রমাণ করে গত মার্চ মাসে ঘটেছে এক অসম্ভব ঘটনা। এ মাসে আমাদের প্রবাসী আয় কমেছে, কমেছে মানে বেশ কমেছে। অথচ এখন পবিত্র রমজান মাস। সামনে ঈদ, আনন্দের উৎসব। এ মাসে এবং পবিত্র কুরবানির ঈদের সময় আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনেরা বাবা-মা, ভাই-বোনের কাছে ডলার পাঠান বেশি বেশি করে। বলাই বাহুল্য, ঈদ খরচ, রোজার মাসের ব্যয় নির্বাহের জন্য। এটাই আমাদের অভিজ্ঞতা। প্রত্যেক বছরেই তা হয়। কিন্তু এবার ঘটে গেল বিরাট ব্যতিক্রম। সরকারিভাবে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় (ডলার) মার্চ মাসে এসেছে অনেক কম। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ১০ এবং ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন (বিলিয়ন সমান শত কোটি) ডলার। বিশাল অঙ্কের টাকা। অথচ চলতি বছরের মার্চে যেখানে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার কথা, সেখানে এসেছে মাত্র ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। এ পরিমাণ ডলার ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে মোটামুটিভাবে এসেছিল। কিন্তু এবারই ঘটল ব্যতিক্রম। সরকারিভাবে রেমিট্যান্স এসেছে কম। অথচ আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, আমাদের ডলার সংকট কেটে গেছে। এমনকি তারা বলছে, রপ্তানির পরিমাণও বাড়ছে। বিদেশিরা ঋণ দিতে তৈরি হচ্ছে। কত আশাবাদ তাদের! বলা হচ্ছে, মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সব জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। দেশ শ্রীলংকার মতো হবে-এ কথা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বালা-মুসিবত আর নেই।
সরকারের এ আশাবাদ শতভাগ সত্য হোক, বাস্তবায়িত হোক-এটাই আমরা চাই। কারণ তাহলে বেঁচে যাব আমরা। বড় কষ্টে আছে মানুষ। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, শুধু রেমিট্যান্সই মার্চ মাসে কম আসেনি, রপ্তানির পরিমাণও এ মাসে কমেছে। ডিসেম্বর ২০২৩ এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩, ৫ দশমিক ৭২ এবং ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে মার্চ মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। অথচ সামনে শুধু পবিত্র ঈদ উৎসবই নয়, ১৪ এপ্রিলে পড়েছে আমাদের আনন্দের আরেক উৎসব-নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ। এ সময়ই রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ক্ষেত্রে এ হতাশাজনক সংবাদ। তাহলে মানুষ ঈদ কীভাবে করবে?
এ প্রশ্নটি আরও বড় হচ্ছে, কারণ দেখা যাচ্ছে গ্রামের মানুষের ব্যাংক আমানত হ্রাস পাচ্ছে। এর অর্থ কী? এর অর্থ হলো, তাদের হাতে টাকা নেই। ব্যাংকের তারল্য সংকট তো আছেই। সরকার সমানে দেশি-বিদেশি ঋণ এখনো করে যাচ্ছে। সরকার তার বিল-বন্ডে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে বাজার থেকে ঋণ করছে। বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে টাকা পাবে। সরকার সেই টাকা দিতে পারছে না। সরকারের রাজস্ব কোনোভাবেই বাড়ছে না। আমদানির পরিমাণ কমানো হয়েছে। রপ্তানি যা হচ্ছে তার প্রকৃত পরিমাণ কী, তা কেউ জানে না-রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মেলালে মেলে না। বাজারে বহু পণ্যের ক্রেতা নেই। কৃষকদের হাতে টাকা নেই। মানুষের ভোগব্যয় কম। এ অবস্থার মধ্যেই এসেছে পবিত্র ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ। তাহলে কি মানুষের অন্য কোনো আয়ের উৎস আছে? হতে পারে ঋণ একটা উৎস। এমনিতেই দেশের ৩০ শতাংশ লোক ঋণী। হয়তো আরও ঋণ তারা করবে। এছাড়া আর অন্য কী পথ আছে? তবে কি ‘হুন্ডিতে’ ডলার আসছে? এসব প্রশ্ন এখন সবার।