ঋণখেলাপিরা কার্যত আবারও ছাড় পাচ্ছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলেও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে নতুন করে ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবে। তবে প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি, নাকি যৌক্তিক কারণে খেলাপি হয়েছে, ব্যাংক তা দেখবে। আর এসব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রজ্ঞাপন জারির পর ঋণখেলাপিরা প্রকাশ্যে উল্লাস করেছেন, এমন খবর হয়তো নেই। তবে তাঁদের হাসিমুখ কল্পনা করে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, খেলাপি গ্রাহকদের ঋণ নেওয়ার পথ শেষ পর্যন্ত উন্মুক্ত হয়েছে। সবচেয়ে চমকপ্রদ হলো, যেভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে। ঋণখেলাপি গ্রাহকদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিবর্তন এনে। গত জুলাইয়ে যখন সংসদে এটি পাস হয়, তখন তাতে অতিরিক্ত সংশোধনীর প্রস্তাব করেছিলেন সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্য, যিনি বর্তমানে সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
জাতীয় সংসদের ফ্লোরে কোনো আইনে সংশোধনী আনা একটি সাধারণ ঘটনা। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধনী আনতে আহসানুল ইসলামের প্রস্তাব কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। ঠিক আগের মাসে, অর্থাৎ জুনে কয়েকজন ব্যাংক পরিচালক সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি লিখিত প্রস্তাবে জানিয়েছিলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে একই গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠান যাতে ঋণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। ওই প্রস্তাবে তাঁরা বলেছিলেন, ঋণ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি না হলে বা যুক্তিসংগত কারণে ঋণখেলাপি হয়ে পড়লে, সেই ঋণকে খেলাপি হিসেবে গণ্য করা উচিত হবে না। ব্যাংক পরিচালকেরা যখন এই প্রস্তাব জমা দেন, তখন সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়ায় এমন কোনো ধারা ছিল না। অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদে যে মতামত পেশ করে, তাতেও ব্যাংক পরিচালকদের প্রস্তাবটি স্থান পায়নি। পরে আইনটি আহসানুল ইসলামের আনা সংশোধনীসহ পাস হয়েছিল।