৮ মার্চ সারা পৃথিবী যখন নারী দিবসের নানা অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত, তখন একা ঘরে আগুনে পুড়ে মারা যান হাতিয়ার প্রবীণ নারী ললিতা বালা।
হাতিয়া পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কালীমন্দির এলাকায় একাই থাকতেন ললিতা বালা। প্রতিদিনের মতো খেয়ে বসতঘরে একা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ললিতা বালা। পরদিন ভোরে পাড়ার লোকজন তাঁর ঘরে আগুন জ্বলতে দেখে এগিয়ে যান। ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস। তাদের চেষ্টায় আগুন নিভলেও ললিতা বালার পুড়ে যাওয়া শরীরে আর প্রাণ ফিরে আসেনি। দগ্ধ দেহেই চিতায় ওঠানো হয় তাঁর মরদেহ।
হাতিয়ার অধিকাংশ প্রবাসীর মতো তাঁর দুই ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওমানে থাকেন। ছেলেরা এখন চাইলেও আর আগের মতো দেশে আসতে পারে না। ওমান এখন বাংলাদেশিদের জন্য ‘দরজা বন্ধ’ নীতি অনুসরণ করছে। ছুটি কাটাতে এসে অনেকেই আর ফিরতে পারেননি। এসব নিয়ে আমাদের কি কোনো হেলদোল আছে? আছে হয়তো ‘তলে তলে’। সময় হলে আমরা টের পাব।
মনে হতে পারে, এসবের সঙ্গে ললিত বালার অসহায়ত্ব বা পুড়ে মরার সম্পর্ক কী? ছেলেদের চিন্তায় কি তাঁর বেচাইন অবস্থা ছিল? রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে সবকিছু আওলাঝাওলা হয়ে গিয়েছিল? তাতেই আগুন সামলাতে পারেননি ললিতা বালা? এসব প্রশ্নের উত্তর এত সহজে কেউ দিতে পারবে না। তবে এটা তো ঠিক, তাঁর সঙ্গে থাকার মতো কেউ ছিল না এবং বয়সের কারণে তিনি ছিলেন কিছুটা দুর্বল।
গত ১৪ জানুয়ারি (২০২৪) রাজশাহী নগরীর এক বাসার দরজা ভেঙে এক প্রবীণ নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দুই দিন ধরে তাঁর কোনো ফোন বা আওয়াজ কেউ পায়নি। জয়শ্রী ভৌমিক (৭০) একটা বাড়ির চারতলায় একাই থাকতেন। তাঁর দুই মেয়ের একজন থাকেন রাশিয়ায়। আর অন্যজন থাকেন শহরের অন্য পাড়ায়, শ্বশুরবাড়িতে। জয়শ্রী ভৌমিকের মরদেহ ঘরের বিছানায় পড়েছিল। তাঁর মুখ ছাড়া শরীর ঢাকা ছিল লেপে। বালিশের কাছে ছিল মোবাইল ফোনটি।
রাজশাহীর এই ঘটনার চার-পাঁচ দিন পর ১৯ জানুয়ারি (২০২৪) সান্তাহার জংশন স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে এক প্রবীণ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। রেলওয়ে পুলিশের ধারণা, তীব্র শীতে ঠান্ডার কারণে তাঁর মৃত্যু হতে পারে। রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞাত প্রবীণ নারী মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে চলতেন। কিছুদিন ধরে তিনি সান্তাহার জংশন স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রাত যাপন করতেন।
একজন অসহায় প্রবীণ নারী ঠান্ডার মধ্যে প্ল্যাটফর্মে দিনের পর দিন শুয়ে থাকছেন, কষ্ট পাচ্ছেন, আমরা সেটা দেখেছি। কিন্তু লাশ না হওয়া পর্যন্ত ‘ইথিওপিয়ার সেই শকুনের’ মতো অপেক্ষা করেছি।