সুচরিতাসু কাদম্বিনী গাঙ্গুলী,
১৯২৩ থেকে ২০২৩—আপনি চলে যাওয়ার শত বছর পর পরিচয় হলো আপনার সঙ্গে। মাত্র ১৯৬ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ থেকে কতটুকুইবা জানা যায়। যে জীবন দক্ষতা ও মমতার সঙ্গে সেবা দিয়ে যায়, একটার পর একটা বাধা ডিঙিয়ে যায় অদম্য মনোবল আর সাহসের সঙ্গে, সময়ের সবটুকু সদ্ব্যবহারে থাকে অবিচল—সেই জীবনের মাহাত্ম্য কাগজের মাত্র কয়েকটি পাতায় আটকানো সম্ভব নয়। তাই আপনাকে চেনার সুযোগ না হলেও এই বস্তুগত জগৎ থেকে আপনার চলে যাওয়ার এক শ বছর পর আপনাকে যৎকিঞ্চিৎ জানার সুযোগ তো হলো।
পশ্চিমের নারীবাদ সগৌরবে এবং সকাতরে আপনার জীবদ্দশাতেই প্রথম ঢেউ তুলেছিল। আপনি তাদের মন্ত্রে, মিছিলে, বৈঠকে—কোথাওই ছিলেন না। আপনার ছয় দশকের জীবনাবসানের অনেক পরে নারীবাদের পরবর্তী ঢেউগুলো যখন সরব থেকে সরবতর হচ্ছিল, তখনো কেউ কোথাও আপনার নামটি উচ্চারণ করেনি।
নারীর অধিকার অর্জনই যদি নারীবাদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে আপনার নামটি তখন কিংবা এর পরে সশ্রদ্ধায় স্মরণ করার কথা তাদের। বর্ণবাদের পর্দায় বরিশালের কাদম্বিনীর নারীবাদী সত্তাটি আড়ালেই রয়ে গিয়েছিল।
সময়ের চেয়ে অগ্রগামী ও অগ্রবর্তী হওয়া সত্ত্বেও আপনাকে নারীবাদী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি কেউ। আপনার জীবন ও কাজ তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ ও গবেষণার বিষয় হয়ে ওঠেনি—না পশ্চিমে, না আপনার নিজ ভূমিতে।
যে সময়ে আপনি ‘কাদম্বিনী’ হয়ে উঠছেন, সে সময়ের শিক্ষিত শ্রেণির ওপর পশ্চিমের প্রভাব প্রচ্ছন্ন না হলেও প্রচ্ছন্নভাবে ছিল। কিন্তু আপনি স্বদেশিই রয়ে গেলেন। তবে অধিকার কী করে আদায় করতে হয়, কীভাবে যোগ্য হয়ে উঠতে হয়, কীভাবে র্যাডিক্যাল না হয়েও অরগানিক থেকেই স্বাধীনতা অর্জন ও তার যথার্থ ব্যবহার করা যায়, তার সবটুকু আপনি দেখিয়ে গিয়েছেন নিজের কাজ দিয়ে।
স্লোগানে-চিৎকারে বা অভিমানে-কান্নাকাটিতে কারও মনোযোগ বা অনুকম্পা নিয়ে নয়, বরং নীরবে নিভৃতে নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছেন সম্মান। স্থান করে নিয়েছেন ইতিহাসে প্রথম বাঙালি নারী চিকিৎসক হিসেবে।