১১ বছর আগের একদিন: লাশকাটা ঘরে ত্বকী

আজকের পত্রিকা মফিদুল হক প্রকাশিত: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১১:০৩

১১ বছর আগের একদিন লাশকাটা ঘরে শুয়েছিল ত্বকী, উত্তীয়-সম নবীন কিশোর, বয়স তার তখনো আঠারোয় পা রাখেনি। শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খালে ৮ মার্চ পাওয়া গিয়েছিল তার মরদেহ, তারপর আইন ও বিচারধারা অনুসারে নিস্পন্দ ত্বকীকে নিয়ে যাওয়া হয় লাশকাটা ঘরে। উটের মতো গ্রীবা বাড়িয়ে কেউ দেখেনি লাশকাটা ঘরে কীভাবে শায়িত ছিল ত্বকী, তখনো কি তার দুই চোখ বিস্ফারিত ছিল মানুষের অতল নির্মমতা, পাশবিকতার পরিচয় পেয়ে। আমরা জানি না, জানার চেষ্টা করাও দুরূহ। কেবল জানতে পারি, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের রিপোর্ট। তিনি বলেছেন, শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তবে এর প্রয়োজন ছিল না। ত্বকীর মাথার তিন দিক থেকে আঘাত করা হয়েছিল, এই আঘাতই তার মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট ছিল। এখানেই আমাদের থেমে যেতে হয়, আর কিছু জানা কঠিন হয়ে পড়ে, কিছু বুঝে-ওঠা মুশকিল হয়ে যায়। যেমন আমরা বুঝি না শব ব্যবচ্ছেদকে কেন বলা হয় ময়নাতদন্ত, ময়না পাখির এখানে কী ভূমিকা! তবে বাস্তব বড়ই নির্মম, একই সঙ্গে দলিত মানুষ বুঝি খোঁজে পাশবিকতা পেরিয়ে শীতল জলের আশ্রয়, ত্বকীর লাশ যেমন আশ্রয় পেয়েছিল নদীর জলে, একদা সবচেয়ে সুপেয় পানি হিসেবে যে শীতলক্ষ্যা নদীর সুনাম ছিল, এখন যে জল রাসায়নিক দূষণে, উন্নয়নের মূল্য পরিশোধ করে হয়ে উঠেছে বিষাক্ত। এমনি বিষময়তার প্রকাশ ঘটিয়ে ঘাতকদের একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সময় বলেছিল, গজারি কাঠের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ত্বকীকে অজ্ঞান করার পর বুকের ওপর বসে গলা টিপে তার শ্বাসরোধ করা হয়। ডাক্তার বলেছিলেন, মাথার তিন দিকের আঘাতই মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট ছিল। ত্বকী তো বয়সের তুলনায় একটু বেশি ছিল সচেতন ও অনুভূতিপ্রবণ। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ সে পড়েছিল, তেমনি পড়েছিল নিটশের রচনার অনুবাদ ‘জরথুস্ত্র বলছেন’। জীবনানন্দের কবিতা তখনো তার প্রিয় হয়ে উঠেছে কি না, জানা নেই; তবে অন্তরে পরম বেদনার সুর সে নিশ্চয় বহন করত, নতুবা কেন সে ছিল এমন মৃদুভাষী, নম্রকণ্ঠ, কাউকে কষ্ট দিতে অপারগ, দেখছে চারপাশের জগৎ, শুষে নিতে চাইছে জীবনের মহিমা, খেরোখাতায় লিখছে কবিতা, স্কুলের রচনায় স্বপ্নের কথা, যে স্বপ্ন সমষ্টিমঙ্গলের।


কে হত্যা করেছে ত্বকীকে? পুলিশ নিশ্চিতভাবে তাদের চেনে। র‍্যাবের তদন্তে আরও জানা গেছে, হত্যাকারীদের পেছনে কারা ছিল, কী কারণে তারা অপাপবিদ্ধ এই কিশোরকে এমনভাবে দুনিয়া থেকে চিরতরে উধাও করে দিতে চাইল। কাগজে-কলমে ত্বকীর হত্যাকারীদের আমরা চিনি না, যদিও জানি ৬ মার্চ বিকেলে সুধীজন পাঠাগারে যাবে বলে ঘর থেকে বের হয়েছিল এই বালক কিশোর। বহু মানুষের বহু যত্নে বন্দর শহর নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছে এই পাঠাগার, সত্যিকার অর্থেই সুধীজনের দ্বারা নির্মিত। বন্দর ও গঞ্জ—দুই-ই জড়িত এই শহরের নামের সঙ্গে, যে দুইয়ের সঙ্গে আছে অর্থ, প্রতিপত্তি, তরক্কি ও ক্ষমতার যোগ। ত্বকী পৌঁছাতে চেয়েছিল সুধীজন পাঠাগারে, অন্যদিকে আছে অনেক প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি, ক্ষমতাধর পরিবারের সদস্য, আছে তাদের অনুসারী যুবগোষ্ঠী, গুরুর হাতের সামান্য ইশারায় যারা করে ফেলতে পারে অনেক দুঃসাধ্য কাজ। পাঠাগারে তারা প্রবেশ করতে পারে না, প্রবেশে আগ্রহী নয়; তবে পাঠাগারের পথের বালককে তুলে নিতে পারে দিবালোকে, হরণ করে যেখানে নিয়ে যেতে পারে, সেখানেও আছে এক কেন্দ্র, অন্যতর এক সমাবেশ, নামে ক্লাব, তবে চালচরিত্রে একেবারে আলাদা। কে হত্যা করেছে ত্বকীকে, আমরা জানলেও অভিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের নাম উচ্চারণ করা যাবে না, আইনের ছাতা মেলে হুংকার দেবে ক্ষমতাধর, সে হুংকারে যত তেজ, ততই প্রকাশ পায় ভেতরের দুর্বলতা। অভিযুক্ত যদি কখনো কেউ হয়ে থাকে, তাহলেও বিচার-সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সে নির্দোষ হিসেবে গলা ফুলিয়ে বন্দর কাঁপাতে পারবে। কিন্তু আড়ালে তো সত্য হাসে, আর সেই সত্য কতভাবেই না নিজেকে প্রকাশ করছে।


১১ বছর আগের একদিন শীতলক্ষ্যার বুক থেকে তুলে লাশকাটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ত্বকীকে, সেই থেকে জীবনানন্দীয় বাস্তবতায়, উপলব্ধির নিবিড়তায় ত্বকীর কোনো বিনাশ নেই। হত্যাকারী এবং তাদের যারা পৃষ্ঠপোষক, তারা বুঝেছিল লোকস্মৃতি বড়ই চঞ্চল, বিস্মৃতিপ্রবণ, সময়ের প্রবাহ মুছে দেবে সব রক্তচিহ্ন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের জনমানসে ত্বকীর অবস্থান তো কিছুতেই মুছে যাওয়ার নয়। বছরান্তে শীতলক্ষ্যার জলে ত্বকী স্মরণে ভাসিয়ে দেওয়া হয় প্রদীপবাহী ছোট ভেলা, খোয়াজ-খিজিরের স্মরণে জীবনের সব দুঃখজয়ের প্রার্থনা নিয়ে যেমন জলপ্লাবিত বাংলার মানুষ ভাসান-যাত্রার উৎসবে মিলিত হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ত্বকী হত্যা মামলায় পলাতক আসামি ভ্রমর কারাগারে

ডেইলি স্টার | নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
৩ বছর, ১ মাস আগে

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us