আট বছর আগের একদিন লাশকাটা ঘরে শুয়ে ছিল তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী, নবীন কিশোর, তখনও আঠারোয় পা রাখেনি। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বাসা থেকে বের হয়েছিল সে। শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খালে ৮ মার্চ পাওয়া গিয়েছিল তার মরদেহ, তারপর আইন ও বিচারধারা অনুসারে নিস্পন্দ ত্বকীকে নিয়ে যাওয়া হয় লাশকাটা ঘরে। উটের মতো গ্রীবা বাড়িয়ে কেউ দেখেনি লাশকাটা ঘরে কীভাবে শায়িত ছিল ত্বকী। তখনও কি তার দু'চোখ বিস্ম্ফারিত ছিল মানুষের অতল নির্মমতা-পাশবিকতার পরিচয় পেয়ে। আমরা জানি না, জানার চেষ্টা করাও দুরূহ। কেবল জানতে পারি ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের রিপোর্ট। তিনি বলেছেন, শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ত্বকীর মাথার তিন দিক থেকে আঘাত করা হয়েছিল। এই আঘাতই তার মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট ছিল। এখানেই আমাদের থেমে যেতে হয়। আর কিছু জানা কঠিন হয়ে পড়ে, কিছু বুঝে ওঠা মুশকিল হয়ে যায়। যেমন আমরা বুঝি না শবব্যবচ্ছেদকে কেন বলা হয় ময়নাতদন্ত, ময়না পাখির এখানে কী ভূমিকা!
তবে বাস্তব বড়ই নির্মম, একই সঙ্গে দলিত মানুষ বুঝি খোঁজে পাশবিকতা পেরিয়ে শীতল জলের আশ্রয়, ত্বকীর লাশ যেমন আশ্রয় পেয়েছিল নদীর জলে, একদা সবচেয়ে সুপেয় পানি হিসেবে যে শীতলক্ষ্যা নদীর সুনাম ছিল, এখন সে জল রাসায়নিক দূষণে উন্নয়নের মূল্য পরিশোধ করে হয়ে উঠেছে বিষাক্ত। এমন বিষময়তার প্রকাশ ঘটিয়ে ঘাতকদের একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সময় বলেছিল, গজারি কাঠের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ত্বকীকে অজ্ঞান করার পর বুকের ওপর বসে গলা টিপে তার শ্বাসরোধ করা হয়। ডাক্তার বলেছিলেন মাথার তিন দিকের আঘাতই মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট ছিল। ত্বকী তো বয়সের তুলনায় একটু বেশি ছিল সচেতন ও অনুভূতিপ্রবণ।