বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, পরিবেশ বিপর্যয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বসবাসযোগ্যতার সূচকে সর্বদা নিম্নসারিতে অবস্থানরত আমাদের ঢাকা সম্প্রতি অগ্নিদুর্ঘটনার শিরোনাম হয়ে বারবার আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। আজকের এ লেখা মূলত রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের সাম্প্রতিক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আলোকে বর্ণিত।
বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন সূচক-সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণ হলেও বিপুল সংখ্যক মানুষকে ধারণ করার জন্য আমাদের নগরগুলো মোটেই প্রস্তুত নয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে ঢাকা মহানগরে বিগত ১০ বছরে ছয়তলা বা ততধিক ভবন নির্মানের হার বেড়েছে ৫১৪ শতাংশ। তবে এসব নির্মাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গিয়ে আধুনিক নগর পরিকল্পনার মূলনীতিসহ অন্য নিয়মনীতির প্রতি রাজউক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সবার পক্ষ থেকে বরাবরই বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডসহ নিমতলি, চুড়িহাট্টা, বনানী এফ আর টাওয়ার, মগবাজার, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের মতো বড় বড় দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
রাজধানী ঢাকা শহরে যে বিল্ডিংগুলো হরহামেশাই নির্মিত হচ্ছে তা বহুলাংশেই যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে না। একটি স্থাপনা থেকে আরেকটি স্থাপনার মধ্যকার খালি জায়গায় কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না, ফলে প্রতিটি স্থাপনার একটিকে আরেকটির অংশ বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবতাবিবর্জিত নগর পরিকল্পনা, সরু গলিপথ, অপর্যাপ্ত সবুজ, এলোমেলো বিভিন্ন নিয়মনীতি ও সমন্বয়হীনতাসহ নানাবিধ জটিলতায় ঢাকা শহরের অধিকাংশ স্থাপনাই যেন একেকটি মৃত্যুপুরি। ভবনের এ ধরনের ডিজাইন, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০, ঢাকা মহানগর ইমারাত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯, ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০১৬-২০৩৫ সহ গ্যাস সিলেন্ডার বিধিমালা ১৯৯১ এর পরিপন্থি।
ঢাকা শহরে বিল্ডিং নির্মাণের পূর্বে রাজউকের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ভবন মালিক কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার প্রবণতা স্পষ্টরূপে লক্ষণীয়। সাধারণত একজন স্থপতির মাধ্যমে রাজউকের প্লান পাস করার মতো করে একটি ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়। অসাধু উপায়ে অর্থাৎ কীভাবে, কোন পন্থায় এবং কি প্যাকেজে ডিজাইন পাস হচ্ছে তা সম্ভবত আমরা সবাই কমবেশি জানি।