ড. মো. সিরাজুল ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর ইনফ্রাস্ট্রাকচার রিসার্চ অ্যান্ড সার্ভিসেসের (সিআইআরএস) পরিচালক। বুয়েট থেকে পুরকৌশলে স্নাতক, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে স্নাতকোত্তর ও জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন তিনি। পানি ও পরিবেশ প্রকৌশল, বিশেষ করে নগর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মূলত তার মূল গবেষণার বিষয়। নগরে আগুন সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন বণিক বার্তায়।
মর্মান্তিক ও প্রাণঘাতী আগুনের ঘটনা ঢাকায় ঘটে যাচ্ছে একের পর এক। কেন এমনটি হচ্ছে?
ড. মো. সিরাজুল ইসলাম: এটি আসলে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমাদের সমাজের হাজারো অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার একটি বহিঃপ্রকাশ বা ফল। ভবনে আগুন লাগতেই পারে এবং এর থেকে বাঁচার উপায় বা সমাধানই বা কী—এটি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় একটি অবশ্যপাঠ্য বিষয়। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে এ ব্যাপারে আইন, বিধিমালা বা নিয়ম নেই। আমাদেরও আছে। বাংলাদেশ নির্মাণ বিধিমালা বা বিএনবিসিতে একটি পুরো সেকশন বরাদ্দ করা আছে আগুন বিষয় নিয়ে। রাজউক যেকোনো ভবন নির্মাণের আগে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দেখে অনুমতি দেয়ার কথা। রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে এই নিয়ম আরো কঠোর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত পরিদর্শন করার কথা। কিন্তু কোনো নিয়মই কাজে আসছে না দুর্নীতির জন্য। যার দেখার সে দেখছে না। যেভাবে পরীক্ষা করে লাইসেন্স দেয়ার কথা সেভাবে দেয়া হচ্ছে না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই তদারকি সংস্থাগুলোকে চালানো হয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়। অথচ জনগণ তাদের থেকে কোনো সেবা পাচ্ছে না, বরং পুড়ে মরছে!
কোনো দুর্ঘটনার পর ‘অনুমোদন ছিল না, নোটিস দিয়েছি’ বলে দায় এড়িয়ে যেতে চায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সত্যিই কি তাদের কোনো দায় নেই?
ড. মো. সিরাজুল ইসলাম: অবশ্যই তারা দায় এড়াতে পারে না। যেমন বেইলি রোডের ভবনটিকে ফায়ার সার্ভিস নাকি তিনবার নোটিস দিয়েছে। তাদের হাতে নাকি উচ্ছেদের ক্ষমতা নেই। তাহলে যাদের হাতে সেই ক্ষমতা আছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে তো তারা উচ্ছেদ বা ভবনটি তালা দিতে পারত। দায়সারা কথা বললে তো হবে না। প্রয়োজনে তারা সেই ক্ষমতার জন্য আইন সংশোধন করুক। আইন তো মানুষের তৈরি, বাইবেল না। যেভাবে ভালো কাজ করে সেভাবেই তো এটি পরিবর্তন করা উচিত। আসলে প্রতিটি দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের যদি জবাবদিহিতার আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হতো, তাহলে সবচেয়ে বেশি কাজ হতো।