আবারও ‘গাফিলতিজনিত’ হত্যাকাণ্ডের দুঃসংবাদে সারাদেশ শোকে সজল হয়ে উঠেছে। সামাজিক মাধ্যম, টেলিভিশন, অনলাইন শুক্রবার রাতে ভরে উঠতে থাকে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের দাউ দাউ আগুনের সংবাদে। এরপর আমরা ওই ভবনসহ আরও বহুতল ভবন-সংক্রান্ত অনিয়মের খবর পাচ্ছি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ‘‘মানুষ মরল নাকি বাঁচল, তা নিয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বেইলি রোডের ভবনটিতে যে ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে, তা আসলে গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড। অগ্নিকাণ্ডে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ ভবন মালিকদের অতি মুনাফার লোভ। একই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি, উদাসীনতা, দায়িত্বহীন এবং অন্যায় আচরণও এ ধরনের ‘হত্যাকাণ্ডে’র জন্য দায়ী।’’
বিশদে যাওয়ার আগে আমরা দ্রুত এ ধরনের ‘গাফিলতিজনিত’ হত্যাকাণ্ডের দিকে ফিরে তাকাই। রাজধানীতে নিয়মিত বিরতিতে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদাম বিস্ফোরণে ৭১ জন নিহত হন। এর এক মাস পর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জন নিহত হন। ২০২১ সালে মগবাজারে ও ২০২৩ সালে সিদ্দিকবাজার ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিস্ফোরণে নিহত হন ৪৪ জন। ২০২৩ সালে বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেট ও কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে।
বনানীর এফআর টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের সময় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি বর্তমানে সংসদ সদস্য, শনিবার জাতীয় সংসদে বলেন, ‘বনানীর ঘটনায় তদন্ত করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি প্রতিবেদন দিলেও সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। চার্জশিট দেওয়ার সময় অনেকের নাম বাদ দেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত ওই মামলার চার্জ গঠন হয়নি।’ (সমকাল, ৩ মার্চ, ২৪)।
সেই ২০১০ সালে চানখাঁরপুলের নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৪৪ জন কিংবা বনানী হয়ে গত শুক্রবারের বেইলি রোডে আগুনে পুড়ে নিহত মানুষের সারি– এর একটি ঘটনার বিচার দূরে থাক, এসবের কোনো একটির পেছনেও কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত ঘাটতি সঠিক তদন্তে উঠে আসেনি। একের পর এক আগুনে দুর্ঘটনা দৈব প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় না, হচ্ছে না; তবে বিচার হয় না কেন? একটি ঘটনা ঘটবার পর কয়েকদিন সংবাদমাধ্যম বেশ তৎপর থাকে, নানা অবহেলার খবর উঠে আসে পত্রিকার পাতায়; আরও একটি ঘটনা সামনে এলেই আগের ঘটনাটি চাপা পড়ে যায়। আমরা ভুলে যাই, আগুনের লেলিহান শিখায় অসহায় মানুষের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের করুণ অধ্যায়। জীবন্ত মানুষের পুড়ে পুড়ে মরে যাওয়া, সারাদেশের মানুষ দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থাকি ভবনের বাইরে।