তাঁর জীবনের সব ভুলভ্রান্তি চুকে গেছে। রাতদিনের দুঃখ-সুখও থেমে গেছে। দু’চোখ বুজেছে যে ঘুমে, তার ‘শান্তি’ কেবল তাঁরই জানা। কেন ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ বা কেন ‘বৃষ্টি খাতুন’– তাও জানা কেবল তাঁরই। অথচ তাঁকে বুঝতে আমাদের কত চেষ্টা, সেটাও নিজের মতো করে! রহস্যও বটে। তাতে ধর্মীয় আবেগ লেগেছে; আলোচনা হাত-পা ছড়িয়েছে। মৃত্যুকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে তাঁর ধর্মীয় পরিচয়।
ডিএনএ পরীক্ষা বা আদালত হয়ে সংকটের ফয়সালা হবে নিশ্চয়। কিন্তু বৃষ্টি বা অভিশ্রুতির ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে যে রহস্যময়তা, তা কি সহজেই কাটবে? নতুন ব্যাখ্যা আসবে; তথ্যের পর তথ্য সাজিয়ে যুক্তি দাঁড় করানো হবে। তবে তাঁর জীবনের যে বাঁক বদল– তা হয়তো থেকে যাবে অজানা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুন। রেস্তোরাঁর আগুনে যে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার একজন তিনি। বংশপরিচয়ের জটিলতায় এখনও হিমঘরে তাঁর মরদেহ।
কর্মক্ষেত্র ও ফেসবুকে তিনি অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামেই পরিচিত ছিলেন। তবে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও চাকরির জীবনবৃত্তান্তে কখনও ‘বৃষ্টি খাতুন’ আবার কখনও ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’। এসব সনদ অনুযায়ী তাঁর বাবা শাবলুল আলম ও মা বিউটি বেগম। তাহলে অপর্ণা শাস্ত্রী কে, যাঁকে মা উল্লেখ করে তিনি চাকরির জন্য জীবনবৃত্তান্ত বানিয়েছেন?
সংবাদমাধ্যমের খবর, বৃষ্টি খাতুন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ার শাবলুল আলম ওরফে সবুজ শেখের মেয়ে। তাঁরা তিন বোন। বৃষ্টি সবার বড়। মেজো বোন ঝর্ণা খাতুন ও ছোট বোন বর্ষা খাতুন। বৃষ্টি গ্রামের স্কুলে পড়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে নিয়েছেন স্নাতক ডিগ্রি। বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে অভিশ্রুতি বা বৃষ্টি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে মরদেহ নিতে ঢাকায় এসেছেন শাবলুল আলম ওরফে সবুজ শেখ। কিন্তু মেয়ের মরদেহ বুঝে পাননি সেই পরিচয় জটিলতার কারণে।
অভিশ্রুতি বা বৃষ্টির পরিচয় নিয়ে এই ধোঁয়াশা মূলত তাঁর নামের কারণে। ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ তাঁর হিন্দু ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরে, ঠিক যেমন মুসলিম ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরে ‘বৃষ্টি খাতুন’। ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা দাবি করেছেন, অভিশ্রুতি ৮-৯ মাস ধরে মন্দিরে যাতায়াত ও পূজা করতেন। সে সূত্রেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। অভিশ্রুতি তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁর মা-বাবা ভারতের বেনারসে থাকতেন। তারা মারা যাওয়ায় দাদুর হাত ধরে ঘটনাচক্রে তিনি কুষ্টিয়ায় আসেন সেই ছোট্টবেলায়। অভিশ্রুতির দাদু মারা গেলে একটি পরিবার তাঁকে দত্তক নেয়। তবে পরিবারটি মুসলিম, না হিন্দু– বলেননি অভিশ্রুতি। এই প্রেক্ষাপটে মন্দিরের পক্ষ থেকে ঢাকার রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিশ্রুতি বা বৃষ্টির পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বলেছে, তাঁর ডিএনএ পরীক্ষা হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে আদালত থেকে।