জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা ঝড়-ঝন্ডা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, উচ্চ তাপমাত্রা, ফ্লাশ-ফ্লাড ইত্যাদির তীব্রতা ত্বরান্বিত করে। বাংলাদেশে আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অনন্য অবদানকারী হলো কৃষিক্ষেত্র। শস্য উৎপাদন গ্রামীণ আয় বৃদ্ধি করে এবং দরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। সব কৃষি কাজের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কৃষিকে চরম ঝুঁকির ভেতর ফেলছে! গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং চরম ভাবাপন্ন জলবায়ুর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা পৃথিবীব্যাপী জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং কৃষিসম্পদ কমে যাওয়াতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, উচ্চ দ্রাঘিমাংশে ফসল উৎপাদনের সময় বেড়ে যাবে, তবে ফলন বৃদ্ধি পাবে, নিম্ন দ্রাঘিমার অব-উষ্ণ ও উষ্ণ এলাকায়, যেখানে বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন তাপদাহে ফলন কমে যাচ্ছে, সেখানে আরো কম ফলন হবে, মৃত্তিকা পানি বাষ্পীভবনের বৃদ্ধিতে ফলন কমে যাবে। (সূত্র : IPCC2007 & US EPA2011)।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও নিয়ম পরিবর্তন-মৃত্তিকা ক্ষয় ও মৃত্তিকা বাষ্প-তে প্রভাব ফেলে- ফলন কমিয়ে দেবে। উচ্চ দ্রাঘিমায় বৃষ্টিপাত বেশি হবে এবং বেশিরভাগ নিম্নো দ্রাঘিমার অব-উষ্ণ এলাকায় কম হবে (২০% পর্যন্ত) যা দীর্ঘকালীন খরার সৃষ্টি করবে। ভূপৃষ্ঠের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বাড়বে, কিছু ফলনের বৃদ্ধি বেশি হবে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাবে উচ্চ তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত এটিকে ছাড়িয়ে যাবে। ট্রোপোষ্পেয়ারিক ওজন দূষিত পর্যায়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির কারণে, খারাপ ওজন বৃদ্ধি পাবে যা জীবন্ত কোষ-কলার ও অন্যান্য পদার্থের ক্ষতি করবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে, যার ক্ষতিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির পাবে, ফলে ফসলের বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে যাবে ।
কৃষিতে উষ্ণতা বা তাপমাত্রার ক্ষতিকারক প্রভাব
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ফসলের ফলন কমে যাবে। ফসলে অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ফসলের জমিতে পরাগী প্রজাপতির পরিভ্রমণ ১৪ শতাংশ হ্রাস পায়। সার্বিকভাবে পরভোজী ও পরাগী প্রজাপতির সংখ্যা কমার কারণে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে।
কৃষিতে শৈত্যপ্রবাহের ক্ষতিকারক প্রভাব
বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে শীতকালের ব্যাপ্তি ও শীতের তীব্রতা দুইই কমে আসছে। বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে শীতকালে ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ফলন হ্রাস পাবে। ফসলের পরাগায়ন ব্যাহত হবে। অতি ঠান্ডায় আলু ,পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ইত্যাদি ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাবে।