একুশের অর্থনীতি

বণিক বার্তা মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪১

কোনো কোনো বিশেষ ঘটনা, কোনো কোনো আত্মত্যাগ আদর্শগত কারণে সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যবহ রূপ লাভ করতে পারে। সেই আত্মত্যাগ যদি হয়ে থাকে মহত্তম কোনো আদর্শের প্রশ্নে, সেই বিশেষ ঘটনায় যদি ঘটে অনির্বাণ আকাঙ্ক্ষার অয়োময় প্রত্যয়ের প্রতিফলন। স্থান-কাল-পাত্রের সীমানা পেরিয়ে সেই ঘটনা ভিন্নতর প্রেক্ষাপটেও নতুন নতুন চেতনার জন্মদাত্রী হিসেবে প্রতিভাত হয়ে থাকে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জীবনে তেমনি এক অসীম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যা আমাদের সার্বিক জাগরণের উৎসমুখও। একুশের চেতনা কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো পরোক্ষ অনুপ্রেরণার সঞ্চারী হিসেবে অন্তরে অনির্বাণ শিখা হয়ে জ্বলে। একুশের চেতনা বারবার সংকটে দিকনির্দেশক, বিভ্রান্তিতে মোহজাল ছিন্নকারী এবং আপাত বন্ধ্যাত্বে সৃষ্টিমুখরতার দ্যোতক বলে প্রমাণিত হয়েছে।


সাত দশক আগে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের যে প্রেক্ষাপট নির্মাণ হয়, তার তাৎক্ষণিক তাৎপর্য মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কাল-পরিক্রমায় এর তাৎপর্যের পরিধি বিস্তৃত হয়। ১৯৪৭-এর ভারত বিভক্তির পর নবসৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ববঙ্গ প্রদেশবাসীদের জাতীয় সত্তা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে শুরু করে প্রথম থেকেই। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতিদানে প্রকাশ্য অস্বীকৃতি পূর্ববঙ্গবাসীদের জাতীয়তাবাদী চেতনার মর্মমূলে হানে আঘাত। ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ ’৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে এক নতুন প্রত্যয় ও প্রতীতি দান করে। ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে একুশের চেতনাই ছিল প্রাণশক্তি। সেই চেতনা ছিল ক্রমান্বয়ে ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, সামাজিক ও সর্বোপরি রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপট।


একুশের চেতনা যে সাংস্কৃতিক চেতনার জন্ম দেয় তার মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশমুখী আন্দোলনের একটা সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও ছিল। একুশের চেতনা এমনই প্রগতিশীল ছিল, এমনই প্রগাঢ় ছিল যে যার জন্য স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম তীব্রতর হয়েছিল। একুশের ভাবধারা প্রথমদিকে কতিপয় ছাত্রসমাজ ও বুদ্ধিজীবী মহলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে তাতে দেশের আপামর জনসাধারণও উদ্বুদ্ধ ও সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে। একুশের মূল্যবোধ যা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, স্বৈরাচারের পতনকার্যে একতাবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করতে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে এবং সর্বোপরি মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হতে শিক্ষা দেয়। একুশের চেতনা দেশের সাহিত্য অঙ্গনেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। জাতীয়তাবোধের উচ্চারণে সমৃদ্ধ সাহিত্যের পাশাপাশি গণমুখী সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন দেশের কবি-সাহিত্যিকরা। সাহিত্যধারায় সূচিত হয় এক নবযুগ। একুশের চেতনা স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশে একটি মহান আত্মপ্রত্যয়ী, স্বধর্মে নিষ্ঠাবান এবং নিজ ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হওয়ার জাতিসত্তার চেতনাকে জাগ্রত করেছিল। একুশের আন্দোলন ছিল মূলত বাঙালির আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের উদ্বোধন।


স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও তাই একুশের চেতনা গোটা জাতির দীর্ঘ পরাধীনতার অভিশাপপ্রসূত দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে আত্মসম্ভ্রমবোধ জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে গঠনমূলক প্রতীতির জন্ম দিয়েছিল। এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেয়ার মধ্যেই একুশের চেতনার সার্থক স্বীকৃতি। স্বাধীনতার স্পর্শে জাতীয় জীবনে নৈতিকতা, পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা, বলিষ্ঠ জাতীয় চরিত্র-চেতনার বিকাশ এবং দারিদ্র্যমোচনের মাধ্যমে স্বনির্ভরশীলতা অর্জনের মধ্যেই একুশের প্রকৃত প্রত্যয় নিহিত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us