বাজার তদারকিসহ নানা পদক্ষেপ অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও চালের বাজারের অস্থিরতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমানো যাচ্ছে না। বিষয়টি উদ্বেগজনক। বস্তুত নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, বাজারে কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পণ্যের সংকট না থাকা সত্ত্বেও বাজারের অস্থিরতার মূল কারণ অসাধু ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি। সবার ধারণা ছিল, আমন ধানের চাল বাজারে এলে দাম কমবে। কিন্তু আমন ওঠার পরও দাম কমেনি। গত বছরও দেশে একই প্রবণতা লক্ষ করা গছে। মজুত ও সরবরাহে ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও কেন কিছুদিন পরপর চালের বাজার অস্থির হয় ওঠে এ প্রশ্নের জবাব মিলে না। কারসাজি করে মৌসুমেও কীভাবে চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয় তা বহুল আলোচিত। সরকার থেকে বলা হয়েছে, মিনিকেট নামে কোনো চাল বাজারজাত করা যাবে না। প্রতিটি চালের বস্তায় ধানের জাত লেখা থাকবে। লেখা থাকবে উৎপাদনের তারিখ ও মিলগেটের মূল্য। সরকারের এত সব উদ্যোগের কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। মিনিকেট নামের চাল বাজারে এখনো বিক্রি হচ্ছে। গত ১ মাসের বিভিন্ন সময় চালের উচ্চমূল্য ঠেকাতে খাদ্যমন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা নানারকম আশ্বাস দিলেও চালের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না। সাধারণ মানুষ মনে করেন, কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
জানা যায়, শিগ্গির এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে। প্রজ্ঞাপন জারির পর বস্তার ওপর ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ এবং মিলগেটের মূল্য-এসব তথ্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অতীতে আমরা লক্ষ করেছি, নিত্যপণ্যের বাজারের কারসাজি বন্ধে কর্তৃপক্ষ নানা আশ্বাস দিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটেনি। কিছুদিন আগে আলু ও ডিম ব্যবসায়ীরা যখন অস্বাভাবিক মুনাফা করছিল, তখন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরাও বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে সবজি বাজারে। গত কয়েক মাসে আলুর বাজারেও নজিরবিহীন অস্থিরতা লক্ষ করা গেছে। এসব পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের বাজারব্যবস্থা। অসাধু ব্যবসায়ীরা কৌশলে অতি মুনাফা লুটছে। প্রশ্ন হলো, এসব যাদের পর্যবেক্ষণ করার কথা তারা কী করেন? কয়েকদিন আগে মিল পর্যায় থেকে কারসাজি করে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে সারা দেশের পাইকারি বাজারে হুহু করে বেড়ে যায় দাম। এর প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে। চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য তখন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মিল মালিকদের দায়ী করেছেন। অবশ্য এরপর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকির পর দাম প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা কমেছিল।