সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর রুমে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে। জাবিতে এমন ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও নারী শিক্ষার্থীরা একাধারে শিক্ষক ও ছাত্রদের দ্বারা যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এমন নৃশংস, জঘন্যতম ঘটনার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা অসংখ্যবার জাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু অপরাধীদের তেমন উল্লেখযোগ্য বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে বলে জানা যায়নি। এর আগে ধর্ষক ও অন্যান্য অপরাধীর বিচার এবং শাস্তি না হওয়ায় জাবিতে পুনরায় ধর্ষণের মতো পাশবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলেই অনেকে মনে করে।
যা-ই হোক, জাবির সাম্প্রতিক ঘটনার দুজন প্রধান আসামিকে ধরা হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারি। যাঁদের পরিচয় হলো একজন জাবির সাবেক ছাত্র ও একজন বহিরাগত, যাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে, অর্থাৎ তাঁরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য। ছাত্রজীবন শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থেকে তাঁরা ছাত্ররাজনীতি করেন। সেই সুবাদে তাঁদের আছে দাপট, প্রভাব ও প্রতাপ।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার সাবেক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করছেন, যেখানে চলমান শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্ত থেকেও অনেক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করার সুযোগ পান না। ছাত্ররাজনীতিকে কতিপয় ব্যক্তি যে কলুষিত করে চলেছেন শৃঙ্খলাবর্জিত কার্যকলাপে, অনৈতিক আচরণে এবং তাঁদের কারণে যে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের পবিত্রতা ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হচ্ছে, তা যেন দেখার কেউ নেই। একজন অভিভাবক আতঙ্কিত হয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তো এখন ধর্ষণের উত্তম জায়গা, যেখানে ধর্ষক নিরাপদে নারী শিক্ষার্থী কিংবা নারী শিক্ষাকর্মীকে নির্বিঘ্নে ধর্ষণ করতে পারে; বিশেষ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষক শিক্ষক কিংবা ধর্ষক ছাত্ররা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্ভবত সে কারণেই অপরাধ করার প্রবণতা বাড়ে, কমে না।’ এটা বলাবাহুল্য যে একটা অন্যায় বা অনিয়ম হাজারটা অন্যায়ের কারণ হতে পারে। ছাত্রত্ব না থাকার পরও যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করতে পারেন, এই অন্যায় বা অনিয়মবোধই তাঁকে ধর্ষণ, মাদক কারবার বা চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করতে সহায়তা করে থাকে।
নিয়মবহির্ভূতভাবে যাঁরা হলে অবস্থান করেন, তাঁরা কাদের প্রশ্রয়, মদদ পেয়ে অবস্থান করেন, ধর্ষণের বিচার না হওয়ার মতোই সেই প্রশ্নের জবাবও মেলে না।
জাবির ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বলেছেন, ২০২২ সালের বিভিন্ন সময়ে একাডেমিক বিষয় নিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। তিনি শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ বিষয় নিয়ে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং একপর্যায়ে তাঁর শারীরিক অবয়ব নিয়ে নোংরা মন্তব্য করতে শুরু করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে প্রতিবাদ সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে তাঁর কক্ষে তালা মারা হয়েছে।