রমজানে যেসব খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, সেগুলোর একটা তালিকা আছে। এতে নতুন নতুন পণ্যও এসে ঢোকে। তালিকা হালনাগাদ করতে হয়। যেমন, ‘অ্যাংকর ডালের’ চাহিদা এ সময়ে বেড়ে যায়। বেসন তৈরিতে অপেক্ষাকৃত সস্তা এ ডালের বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর যে বাণিজ্য জমে ওঠে, তাতে আলুর চপ ও বেগুনি তৈরিতে লাগে বেসন। এতে ভোজ্যতেলের ব্যবহারও বেড়ে যায়। ভাজাপোড়ায় পাম অয়েল ব্যবহারের চল রয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিপুল ব্যবহার রয়েছে এর। নইলে এত পাম অয়েল আমদানি হবে কেন? তবে ঘরে সয়াবিন তেলের ব্যবহারই বেশি। এর দাম কিছুটা বেশি। এ কারণে পাম অয়েলের ব্যবহার ঘরেও বাড়তে পারে। দামের কারণে খোলা সয়াবিনের ব্যবহার ইতোমধ্যে বেড়েছে।
রমজানে অ্যাংকর ডালের চাহিদা বাড়ার কথা হচ্ছিল। এর আমদানি পরিস্থিতির ওপর একটি প্রতিবেদন পড়লাম সংবাদপত্রে। ইউক্রেন থেকে নাকি বেশির ভাগ অ্যাংকর ডাল আসত। এখন অন্য উৎস থেকে এর আমদানি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে। রমজানে খেজুরের চাহিদা বাড়তে বাড়তে এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে, এর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও চ্যালেঞ্জ। গত বছর এর আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল সরকার ও ভোক্তা উভয় পক্ষকে ঠকানোর। সেটা বন্ধে খেজুরে কর-শুল্কের যে ব্যবস্থা হয়েছে, তাতে রমজানের আগেই এর দাম গেছে ব্যাপকভাবে বেড়ে। খেজুরের আমদানিও কমেছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বিক্রি কমবে; আমদানিও কম হবে, এটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা অবশ্য অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়েও বেশি আমদানি করে ফেলে। মসলার বাজারে এটা ঘটতে দেখা গেছে। এমনও ঘটে-চোরাই পথে মসলা এসে যাওয়ায় দাম গেল কমে। মাঝে যে গোমাংসের দাম কমে গিয়েছিল, তখনো এর কারণ হিসাবে বলা হয় প্রতিবেশী দেশ থেকে গরু আসার কথা। গোমাংসের দাম অবশ্য আগের স্তরে এসে যাচ্ছে। রমজানে এর দামটা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে খুশি হতো নিম্ন-আয়ের মানুষ। গোমাংস কিছুটা কম দামে বিক্রি হওয়ায় তারা কতই না খুশি হয়েছিল! রমজানে গোমাংসের চাহিদা বেড়ে যাওয়াটাও সাম্প্রতিক প্রবণতা। এর দাম ক্রমে বেড়ে যাওয়ার সময়টাতেই আবার এমনটা ঘটেছে। বোঝা যায়, একশ্রেণির মানুষের জন্য দামটা বড় সমস্যা নয়। তাদের আয় নিশ্চয় অধিকতর হারে বেড়েছে। তবে গোমাংসের দাম কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা হয়ে যাওয়া নিয়ে সচ্ছলরাও অভিযোগ করছিল। বিশ্বের কোথায় কোন জিনিসের কত দাম, সেটা তো এখন সহজেই জানা যায়। এ বিষয়ে মিডিয়ায়ও খবর প্রচার হচ্ছে। তাতে তুলনার সুযোগটা বাড়ছে বৈকি। এতে পণ্যবাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের ওপর চাপও বাড়ছে। অন্তত প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে তাদের।
এটা অবশ্য বড় প্রশ্ন নয় যে, রমজানে গোমাংসের দাম কেমন থাকবে। বড় প্রশ্ন-খেজুরের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে কি না। ভোজ্যতেলের চাহিদার ৫-৭ শতাংশ হলেও দেশে উৎপাদন হয়। কিন্তু খেজুরের পুরোটাই হয় আমদানি। তবে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, খেজুরের মতো খাদ্যপণ্য আমদানিতে এলসি জটিলতা নেই। রমজান সামনে রেখে এসব পণ্যের আমদানি প্রক্রিয়া নাকি সচল। আর মজুত ভালো। এসব তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার বেলায় অবশ্য অনেক সময় চাহিদার দিকটি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। সংকট দেখা দিলে বেরিয়ে আসে পুরো চিত্রটা। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের ভাষ্য নেওয়া প্রয়োজন। তারা বরং অনেক ক্ষেত্রে ভালো ধারণা দিতে পারেন। তাদের প্রক্ষেপণও বেশি বাস্তবসম্মত হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আলুর কথা বলা যায়। আলুর উৎপাদনে যে ঘাটতি রয়েছে, সেটা এর ব্যবসায়ীরাই দৃঢ়ভাবে বলছিলেন সরকারি তথ্য-উপাত্ত পাশে সরিয়ে। শেষে আলু আমদানির সিদ্ধান্তে সরকারও একরকম স্বীকার করে নেয় ওই বক্তব্য। নতুন আলু ওঠার পরও এর দাম সহনীয় হয়ে আসেনি। রমজান আসতে আসতে এর দাম আরেকটু কমে গত বছরের কাছাকাছি আসবে হয়তো। এর মধ্যে কত টাকা যে ক্রেতাদের পকেট থেকে বেরিয়ে গেল-কে তার জবাবদিহি করবে? তাও আলুর বর্ধিত দামটা যদি কৃষক পেত! তবে শীতে ওঠা নতুন আলুর ভালো দাম নাকি পেয়েছে কৃষক। ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজের দামও নাকি ভালোই পেয়েছে-যেহেতু বাজারে আছে সংকট। ভারত থেকে আমদানিতে নতুন জটিলতা সৃষ্টির ঘটনায় এখানে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম কীভাবে বেড়ে গিয়েছিল, সেটা এখনো তাজা স্মৃতি। তা কিছুটা ফিকে হয়ে আসত-দামটা সহনীয় হয়ে এলে। পেঁয়াজের মূল মৌসুম অবশ্য রয়েছে সামনে। রমজানের সঙ্গে সময়টা মিলে যাওয়ায় এর দাম কমে আসার সম্ভাবনা আছে তখন। ভারতেও নাকি পেঁয়াজের দাম কমে আসার প্রবণতা রয়েছে। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী কোটায় ওখান থেকে যেসব পণ্য আনতে সচেষ্ট, এর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ। দেশে এর ফলন কি ভালো নয়? নাকি সরকার বেশি সতর্ক পেঁয়াজের মতো পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে?