নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের কলাপসিবল গেটে বড়সড় তালাটি ঝুলছিল আড়াই মাস ধরে। অফিসের সামনে সারাক্ষণ পুলিশ পাহারা থাকত, যাতে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সংলাপের আখেরি আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। অন্যান্য দলের চিঠি যথারীতি নেতাদের কাছে চলে গেছে। কিন্তু তালাবদ্ধ বিএনপির অফিস ও কারারুদ্ধ নেতাদের কাছে চিঠিটি পৌঁছাবে কীভাবে? নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মী বিএনপির অফিসে চিঠিটি কলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে একটি টেবিলের ওপর রেখে যান।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনাদের বাইরে রেখেই ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনটি সরকার করতে পেরেছে বড় ধরনের বাধা ছাড়াই। এর অর্থ এই নয় যে এই নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। আগের দুটি নির্বাচনের মতো ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। গত বছর ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটে; যার জের ধরে সরকার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী দলের ১৩ হাজার নেতা-কর্মীকে কারারুদ্ধ করে।
নির্বাচনের চার দিন পর ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সহযোদ্ধাদের নিয়ে কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে বিএনপির অফিসে ঢোকেন।
রিজভীর অভিযোগ, ২৮ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেওয়ার পর পুলিশ কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। দুই মাসের বেশি সময় পুলিশ কাউকে সেখানে ঢুকতে দেয়নি, আশপাশে ভিড়লেও তাঁদের আটক করে নিয়ে গেছে। পুলিশ চাবি না দেওয়ায় তালা ভেঙে তাঁরা কার্যালয়ে ঢুকেছেন। এর আগে বুধবার অফিসের তালা খুলে দেওয়ার জন্য ডিএমপির কাছে চিঠিও লিখেছিলেন তিনি।
ডিএমপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফটকে পুলিশ তালা দিয়েছে বলে যে দাবি বৃহস্পতিবার সকালে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী করেছেন, তা সত্য নয়। তাদের দাবি, বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশ কখনো তালা দেয়নি। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ শেষে সে রাতে কার্যালয়েই ছিলেন ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী সোহাগ। পরদিন সকালে ফটকে তালা লাগিয়ে চলে যান তিনি।
তাহলে কার কথা ঠিক, বিএনপি নাকি ডিএমপির? বিএনপির অফিসের কর্মী সোহাগ তালা বন্ধ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার পরদিন কি তালা খুলতে এসেছিলেন? আসার মতো পরিস্থিতি কি ছিল? আগেই পুলিশ বিএনপির অফিসের সামনের রাস্তায় ক্রাইম সিন ব্যানার ঝুলিয়ে নগরবাসীকে সতর্ক করে দেয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরেও একই ঘটনা ঘটেছিল। একটি রাজনৈতিক দলের অফিস খোলা ও বন্ধ করা নিয়ে এই বিড়াল-ইঁদুর খেলা কেন?