বয়স বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় মানুষকে শৈশব থেকে কৈশোর, এরপর তরুণ এবং সর্বশেষ প্রৌঢ়ত্বের কাল অতিক্রম করতে হয়। মানুষের প্রাপ্তবয়স্কতা ধরে নেওয়া হয় যখন তারা তরুণ বয়সে পদার্পণ করে। এ প্রাপ্তবয়স্কতাকে সাধারণত কয়েকটি সময়কালে বিভক্ত করা হয়। ১. যৌবন বা প্রারম্ভিক প্রাপ্তবয়স্কতা (Young Adulthood), যার সময়কাল থাকে ১৮ থেকে ৩৯ বছর পর্যন্ত। এ বয়সসীমার ব্যক্তিদের বলা হয়ে থাকে নবীন প্রজন্ম; ২. মধ্য প্রাপ্তবয়স্কতা (Middle Adulthood), যার সময়কাল ৪০ থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এ সময়কালের ব্যক্তিদের বলা হয় মধ্যবয়সি। ৩. বৃদ্ধ প্রাপ্তবয়স্কতা (Old Adulthood), যা ৬০ বছর থেকে শুরু করে ৭৪ বছর সময়কাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এ সময়ের ব্যক্তিদের বলা হয় বৃদ্ধ। এবং ৪. প্রৌঢ় প্রাপ্তবয়স্কতা (Elderly Old Adulthood), যার সময়কাল ৭৫ বছর ও তদূর্ধ্ব। এ সময়ের ব্যক্তিদের বলা হয়ে থাকে প্রৌঢ়। তবে, প্রাপ্তবয়স বিবেচনায় মধ্যবয়সি, বৃদ্ধ ও প্রৌঢ় উভয় ক্যাটাগরির ব্যক্তিদের আমাদের দেশে প্রবীণ প্রজন্ম বলে আখ্যায়িত করা হয়। অনেকে সম্মানসূচক সম্মোধনে তাদেরকে মুরুব্বি বলে মূল্যায়ন করে থাকে। আধুনিক সভ্যতায়, বর্তমানে তাদেরকে জ্যেষ্ঠ নাগরিক বা সিনিয়র সিটিজেন হিসাবেও অভিহিত করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই একজন প্রবীণ নাগরিক হলেন অবসরের বয়সের যে কেউ বা এমন একজন ব্যক্তি যার বয়স ৬০ থেকে ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব। জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তিরা প্রবীণ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। ২০২৫ সাল নাগাদ প্রবীণের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হয়।
প্রবীণ বলি আর সিনিয়র সিটিজেন বলি; তাদের অনেকেরই শেষ জীবনে সঙ্গী হয় অসহায়ত্ব ও একাকিত্ব। আবার কারও জীবনে শেষ আবাসস্থল হয় বৃদ্ধাশ্রম। এ সময় তাদের জন্য প্রয়োজন আলাদা যত্ন এবং সেবা। পৃথিবীর সব মানুষকেই ক্রমবর্ধমান বয়সের ধারায় প্রবীণ হতে হবে ও তাদেরই সন্তান-সন্ততি হয়তো নবীন বয়সে অবস্থান করতে পারে। এভাবেই জীবনের ঘূর্ণায়মান চক্রে মানুষ নবীন থেকে প্রবীণ হয়। আজ যারা শিশু থেকে নবীন, সময়ের ব্যবধানে তারা প্রবীণ হয়ে ওঠেন। সুতরাং নবীনরা যদি তাদের প্রবীণ বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন বা সমাজের বয়স্কদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে পারে, তাহলে তারা যখন প্রবীণদের সারিতে যুক্ত হবেন, তখন তাদেরও প্রবীণ জীবনের প্রকৃত অনুভূতি ও প্রত্যাশা জাগ্রত হবে।
অধুনা বিশ্বে নবীন ও প্রবীণ উভয়ের একে অন্যের প্রতি অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। জীবনচক্রে প্রবীণরা শিশুদের মতো আনন্দ-উল্লাস ও আদর-ভালোবাসায় সিক্ত হতে চায়। তাদের প্রতি নবীনদের বিশেষ যত্ন প্রবীণদের সুন্দর জীবনের আনন্দ দেয়। অন্যদিকে, প্রবীণদের সাহচর্যে নবীনরাও হয়ে ওঠে জ্ঞানে-গুণে ও দক্ষতা-অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। সুতরাং নবীন প্রজন্ম ও প্রবীণ প্রজন্ম যত বেশি সময় একসঙ্গে কাটাতে পারে, উভয় পক্ষই তত বেশি উপকৃত হতে পারে। নবীনদের একটি উষ্ণ এবং সংক্রামক শক্তি আছে, যা প্রবীণদের কাঙ্ক্ষিত আনন্দ আনতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রবীণদের সঙ্গে নবীনদের সংযুক্তি উভয়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে, যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করতে ও স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।