বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন শেষ হয়েছে চলতি মাসের ১৩ তারিখ। এবারের সম্মেলন বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির শিকার দেশগুলোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবারই প্রথম গঠন হয়েছে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড। এ ফান্ড থেকে অর্থপ্রাপ্তির জন্য প্রয়োজন নিঁখুত পরিকল্পনা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা। জলবায়ু সম্মেলন-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও প্রাপ্তিসহ সম্মেলনের নানা বিষয় নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।
সম্প্রতি শেষ হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষয়ক্ষতির শিকার দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে এবারের সম্মেলন মূল্যায়ন করুন।
সাবের হোসেন চৌধুরী: জলবায়ু নিয়ে যেসব কাজ হয় সেখানে বেশকিছু গ্যাপ দেখা গেছে। বড় গ্যাপ ছিল ঐকমত্য ও আস্থার জায়গায়। এ ধরনের কাজগুলোয় এক ধরনের অবিশ্বাস বিরাজ করে। এর যথেষ্ট কারণও আছে। আজ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মঞ্চে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে, একটিও কিন্তু যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। আমরা যদি অর্থায়নের কথা বলি কিংবা কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বলি, কোনোটিই সেভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। স্ট্যাবিলাইজিং গ্রিনহাউজ গ্যাস চুক্তিও সেভাবে কার্যকর হয়নি। আমরা তো নিঃসরণ স্থিতিশীল করতে পারিনি। তার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। সুতরাং চুক্তিটিই হতাশাজনক ব্যাপার হিসেবে দাঁড়িয়েছে। চুক্তির যে মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সেখান থেকে কিন্তু আমরা দিন দিন আরো দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদের প্রথম চাওয়া ছিল, এবারের কপে এমন কিছু করতে হবে যার ফলে সেই আস্থা সৃষ্টি করতে পারি, সেই ঐকমত্য সৃষ্টি করতে পারি এবং সেটি কীসের ওপর আমরা নির্মাণ করব? বাংলাদেশের পজিশন ছিল ১ দশমিক ৫। সবকিছুই আমাকে দেখতে হবে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চশমা দিয়ে। এটির ওপরই নির্ভর করছে সারা পৃথিবীতে কী পরিমাণ মিটিগেশন অ্যাশিওরের প্রয়োজন। এটির ওপর নির্ভর করছে আমাদের অভিযোজনের জন্য কী ধরনের রিসোর্সের প্রয়োজন। এটির ওপর আরো নির্ভর করছে, যেখানে আমরা অভিযোজন করতে পারব না, সেটা লস অ্যান্ড ড্যামেজে চলে যাবে; সুতরাং লস অ্যান্ড ড্যামেজের পদ্ধতি ও পদক্ষেপ কী হবে? আমাদের অবস্থান ছিল মিটিগেশন, অভিযোজন এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ। এটি কিন্তু একটি যৌথ ব্যাপার। আমরা লস অ্যান্ড ড্যামেজকে আলাদা করে দেখতে পারি না। আমরা যতই মিটিগেশনে অ্যাট্রাক্টিভ হব, ততই অভিযোজনের ওপর আমাদের চাপ কমবে এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজে চলে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। এটা আমাদের অন্যতম জোরালো বিষয় ছিল। আরেকটি ছিল, আমরা অনেকে অর্থায়ন নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু আমরা যদি মূল জায়গায় আসি তাহলে দেখব অর্থায়ন কিন্তু মূল আলোচ্য বিষয় নয়। অর্থায়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল মিটিগেশন এবং অভিযোজন ফিফটি ফিফটি হতে হবে এবং এটি পাবলিক ফান্ড হতে হবে। পাশাপাশি এটি রানও করতে হবে। কিন্তু আমরা এখনো কোনোটির কাছাকাছিও যেতে পারিনি। অক্সফামের রিপোর্টে যেটি দেখলাম, জলবায়ু অর্থায়নের কোনো সংজ্ঞাই এখনো নির্ধারিত হয়নি। এ মৌলিক বিষয়টিই আমরা এখনো অনিষ্পন্ন অবস্থায় রেখে দিয়েছি। আমরা ফিগার নিয়ে কথা বলছি—মিলিয়ন, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন; অথচ এটার কোনো সংজ্ঞাই দাঁড় করাতে পারিনি। যদি আমরা সংজ্ঞার বিষয়টিই নিষ্পত্তি করতে না পারি তাহলে অ্যাকাউন্টেবিলিটি কোন জায়গায় আসবে? এ সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এটি কোয়ান্টিফাই করতে না পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এগোতে পারব না।
কপ২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন বিষয়ে জোরালোভাবে বলা হয়েছে?
সাবের হোসেন চৌধুরী: এবারের সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা ছিল ১২ ডিসেম্বর। ১১ তারিখ রাতে আমাদের একটি টেক্সট দেয়া হলো। সেখানে দুটি বিষয় ছিল। একটি হলো, অতীতে আমাদের যে ঘাটতি ছিল, যেটা আমরা করতে পারিনি। আরেকটি হলো, ভবিষ্যতে ঘাটতিগুলো কীভাবে পূরণ করব। এটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথম যে টেক্সট আসে, সেখানে ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুই ছিল না। অতীতের ঘাটতিগুলো তো আমরা সবাই জানি। এটি নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। আমরা যেটির ওপর সবচেয়ে জোর দিয়েছি সেটি হলো ১ দশমিক ৫। এই ১ দশমিক ৫-এর যে ল্যাঙ্গুয়েজ তা দুর্বল ছিল। অনেকেই ভাবছিলেন হয়তো ১ দশমিক ৫ এবার আর টিকে থাকবে না। আপনারা যদি হিসাব করে দেখেন, ১১ বার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস টেম্পারেচার গোল উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ছিল আমাদের মূল জায়গা। সেটি কিন্তু গ্লোবাল স্টকটেকের মধ্যেও আছে।