একটা নির্বাচন তো হয়েই যাবে। কিন্তু তারপর কী হবে? এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা কি দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে?ভাঙা রেকর্ডের মতো এই কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। অবস্থা এমন হয়েছে, এ কথাগুলোকে খুব একটা গুরুত্বও আর দেওয়া হয় না। ক্ষমতার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এমন কোনো প্রতিষ্ঠান আর নেই। পত্র-পত্রিকার ধার কমে গেছে অনেকটাই।
ফেসবুক বা এ রকম যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় প্রত্যেকেই কথা বলছে, শুনছে কম। কথা বলার অধিকারটাই বহাল আছে, শোনার নয়। তাই সবাই যখন কথা বলতে থাকে, কেউই কারও কথা শোনে না, তখন যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করা কঠিন। তাই মৌলিক জায়গাগুলোয় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা কতটা, সেটা নিয়ে আমরা আর মাথা ঘামাই না। তাই নির্বাচন আসলে জীবনযাত্রায়, ভাবনায়, পরিকল্পনায়, প্রায়োগিক আচরণে কী কী পরিবর্তন আনতে পারে, সেটা গৌণ হয়ে যায়।
বুঝলাম, একটা নির্বাচন হলে সংবিধান সমুন্নত থাকবে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা সচল থাকবে। সেটা তো আসলে কেতাবি কথা। যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাতে এই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা সচল থাকার মানে কী? এর সুফল কি জনগণ পাবে? তারা কি আদৌ একটা অসাম্প্রদায়িক, সহনশীল সমাজে বসবাস করার সুযোগ পাবে? তারা কি তাদের মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবে?
আমাদের দেশে বুদ্ধিজীবিতা এখন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেটা সাদা চোখেই দেখা যায়। দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে মোক্ষ লাভ হতে পারে—এই চিন্তা যিনি করেন, তিনি আদৌ বুদ্ধিজীবী নন। যে মানুষই সত্য বলুন না কেন, তার পাশে দাঁড়ানোর মতো কজন মানুষ আছেন আমাদের দেশে? আমরা কার কথা শোনার জন্য আগ্রহী হব? ‘কে আমাদের পথ দেখাবে?’
২. আমজনতা অর্থনীতি বোঝে না। অর্জিত বা সঞ্চিতি অর্থ দিয়ে জীবনকে অর্থবহ করে তোলার উপায় খোঁজে মাত্র। মাস শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার সংস্থান হলে সেই টাকা দিয়ে জীবনের ছক কাটে। পারিবারিক বাজেটটাও দেশের বাজেটের মতো। কারও কারও বাজেটে টান পড়ে, কারও কারও থাকে উদ্বৃত্ত বাজেট। আমজনতা কোনো গবেষণা ছাড়াই বুঝতে পারে, অর্থব্যবস্থায় কিছু একটা ঘাপলা রয়েছে।
মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখা যায় হাজার কোটি টাকা পাচারের সংবাদ। দু-এক দিন সেই সংবাদ থাকে টক অব দ্য টাউন হয়ে। এরপর নতুন আরেক রাঘব বোয়ালের খবর প্রকাশিত হলে আগের চুরি-বাটপারির কথা ভুলে নতুনটা নিয়ে উৎসুক হয়ে পড়ে আমজনতা। মুখরোচক বেগমপাড়া আড্ডায় থাকার পর সুইস ব্যাংকে কার কত টাকা আছে, সেটা হয় আলোচনার বিষয়। ঋণখেলাপিরা কী করে কোনো শাস্তি ছাড়াই মহানন্দে জনগণের টাকা লোপাট করে যাচ্ছেন, সে কথা বলার পর ব্যাংকের সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তাদের কথাও আসে আমজনতার মুখে। জনগণের টাকাকে নিজের টাকা মনে করে এই ব্যাংক কর্মকর্তারা যেভাবে কপট শিল্পপতিদের ঋণের ব্যবস্থা করে দেন, সেই আলোচনায় তাদের দিন কাটে।
আমজনতাও মাঝে মাঝে ভাবনায় পড়ে। যখন তারা নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, উন্নয়ন হচ্ছে বটে, কিন্তু উন্নয়নের নামে লুটপাটও তো হচ্ছে। এরপর তারা ভাবে, এক সরকার আসে, লুটপাটের জন্য একশ্রেণির সুবিধাভোগী সৃষ্টি করে, তারা দেশে ও বিদেশে আখের গোছায়, এরপর যদি আরেক সরকার আসে, তারাও তখন আগের সরকারের লুটপাটের পথগুলোকে নিজের পবিত্র পথ বলে গণ্য করে, নিজের সুবিধা বাড়ানোর জন্য আরও নতুন নতুন পথের সন্ধান করতে থাকে।