দুটো ক্যাচি শব্দ ব্যবহার করে পুরোনো কারিকুলামে কালিমা লেপন করে নতুন শিক্ষাক্রমকে ন্যায্য বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। শব্দ দুটো হলো ‘কোচিং বাণিজ্য’ আর ‘মুখস্থ বিদ্যা’! দুইটার কোনোটির সাথে কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
আগে বুঝতে হবে কোচিং বাণিজ্য কেন হচ্ছে? এবং বুঝতে হবে ছাত্ররা কেন মুখস্থ করে? দুটোর কারণই হলো শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর মতো হয় যোগ্য শিক্ষক নেই অথবা শিক্ষকদের কম বেতন দেওয়ার কারণে শ্রেণিকক্ষে কম পড়িয়ে এবং কম বুঝিয়ে প্রাইভেট ও কোচিং-এ পড়ার চাহিদা তৈরি করা হচ্ছে।
এই যে একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ইচ্ছে করে কম বা খারাপ পড়াচ্ছেন এর কারণ কী? আমরা কি এর কারণ খোঁজার বা বোঝার চেষ্টা করেছি? কম বা খারাপ পড়ানো বা কোচিংমুখী হওয়ার কারণে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই কারণগুলো শনাক্ত করতে না পারলে বা করার চেষ্টা না করলে এর সঠিক চিকিৎসা বা নিরাময় সম্ভব না।
কোচিং বাণিজ্য হলো আমাদের স্কুল-কলেজে মানহীন শিক্ষক ও তাদের অল্প বেতন দেওয়ার ফল। যারা কারণ এবং প্রভাব বোঝে না তারাই কেবল ওই দুটো শব্দ ব্যবহার করে একটা খারাপ সিস্টেম চাপিয়ে দিতে চাইছে।
শ্রেণিকক্ষে ভালোভাবে বোঝাতে না পারা ও মানসম্মত প্রশ্ন করতে না পারার কারণ হলো মুখস্থ বিদ্যা। আর কথায় কথায় মুখস্থ বিদ্যাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করাও ঠিক না। লেখাপড়া করতে হলে কিছু জিনিস স্মরণে রাখার জন্য মুখস্থ করতে হয়। এই জন্যই মানুষের লঘুমস্তিষ্কের কাজ হলো পদ্ধতিগত স্মৃতি প্রক্রিয়া করা আর হিপ্পোক্যাম্পাস (Hippocampus) নামক আরেকটি স্থান আছে যেখানে নতুন স্মৃতি এনকোড করা হয়।
কম্পিউটারেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো মেমরি (Memory)। মনে রাখতে পারা এটা মানুষ নামক প্রাণীর বিশেষ গুণ। ভালো বেতন না দেওয়ার কারণে ভালো শিক্ষকরা শিক্ষকতা পেশায় আসে না, আবার আসলেও অতিরিক্ত আয়ের জন্য শ্রেণিকক্ষে ভালো পড়ায় না যাতে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে কিংবা তার কোচিং-এ পড়তে যায়।
এতে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কটা অর্থ লেনদেনের ফাঁদে পড়ে। ফলে সুষ্ঠু ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। উন্নত দেশে শিক্ষকদের এমন বেতন দেওয়া হয় যাতে জীবনযাপনের জন্য সে আর প্রাইভেট কিংবা কোচিং-এ পড়ানোর চিন্তা করতে হয় না। উপরন্তু ফিনল্যান্ডে শিক্ষকদের বেশি বেতন দিয়ে কর্মঘণ্টা কম করা হয় যেন শিক্ষকরা পরদিনের ক্লাস পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় পায়।
আমাদের দেশে শুধু স্কুল-কলেজ না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও একাধিক জায়গায় পার্ট-টাইম পড়িয়ে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করছে। যারা পার্ট-টাইম পড়াচ্ছে না তারা রাজনীতি কিংবা অন্যকোনো পথ বেছে নিয়ে মোটামুটি একটা আরামদায়ক জীবন তৈরি করে নিচ্ছে। কিন্তু এতে বলির পাঁঠা হচ্ছে শিক্ষকরা।