আমেরিকান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সিমোর হার্স তাঁর ওয়েবসাইটে একটি খবর প্রকাশ করেছেন। সেই খবর রুশ সংবাদমাধ্যম বেশ ফলাও করে প্রচার করেছে। খবরটি হলো, ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি ও রাশিয়ার সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ গোপনে একটি আপসরফা করছেন, যা ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্রের বরাতে খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, খবরটি আসলে সত্যি কি না?
প্রকৃত সত্যিটা হচ্ছে, জালুঝনিসহ ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্পর্ক খুব খারাপ। এই সম্পর্ক এত খারাপ যে নভেম্বর মাসের শেষ দিকে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে জালুঝনি ও অন্য জেনারেলরা অংশ নেননি। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো, জেলেনস্কি ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের গভর্নরদের নির্দেশ দিয়েছেন জালুঝনির সঙ্গে আলাপ না করতে।
জেলেনস্কি ও জালুঝনির মধ্যে যে বৈরী সম্পর্ক, সেই প্রেক্ষাপট থেকে বলা যায়, জালুঝনি যদি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আপসরফা করেন, কিংবা তা করার চেষ্টা করেন, তাহলে ইউক্রেনকে খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হবে। জেলেনস্কি এরই মধ্যে এটা স্পষ্ট করেছেন যে তাঁর সরকার মস্কোর সঙ্গে কোনো আপসরফা (কেননা, আইনে তা বারণ আছে) করবে না।
হার্সের খবরের পর রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম বলছে, দুই দেশের জেনারেলদের মধ্যে চুক্তির আলোচনায় দুটি বড় শর্ত এসেছে। প্রথমটি হচ্ছে, ইউক্রেনের যে ভূখণ্ড এখন রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে, কিয়েভ যেন একমাত্রায় তার স্বীকৃতি দেয়। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, ইউক্রেনে ন্যাটোর কোনো ঘাঁটি থাকবে না, সেই শর্তে রাশিয়া ইউক্রেনকে ন্যাটোয় যুক্ত হতে দেবে। শর্তটি সব দিক থেকেই অসম্ভব বলে মনে হয়।
ভূখণ্ড-সম্পর্কিত শর্তটির ক্ষেত্রে বলা যায়, জালুঝনি কয়েক মাস একটু ভিন্নভাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন। প্রথমত, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যে ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটা ছাড়াই ইউক্রেন নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে।
তিনি এ-ও বলেছিলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষে ইউক্রেন রক্ষার সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে, সীমান্তরেখা থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সরিয়ে নেওয়া এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা।
জালুঝনি চান, ইউক্রেনীয় সেনাদের রক্তঝরা বন্ধ হোক এবং তাঁদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা হোক। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, জেলেনস্কি নিজেও এখন একই কথা বলছেন।