বিজয় আমরা ধরে রাখতে পারি না

আজকের পত্রিকা বিভুরঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৭

ডিসেম্বর মাস এলেই আমরা অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। কারণ ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আগেই দেশের অনেক অঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়েছিল। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় আমাদের মুক্তিবাহিনী বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছিল মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে। মানুষ মুক্তি ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল।


ডিসেম্বর এলে আমিও স্বাভাবিকভাবেই তারুণ্যদীপ্ত হয়ে উঠি। মনে হয় আমি বুঝি সেই কলেজপড়ুয়া তরুণই আছি। হ্যাঁ, একাত্তরে আমি যখন দিনাজপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র, তখনই শুরু হয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তারপর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা শুরু করে নৃশংস গণহত্যা। নিরস্ত্র বাঙালি রুখে দাঁড়ায়, ‘যার যা আছে’ তা-ই নিয়ে শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ।


আমার নিজের জেলা পঞ্চগড় মুক্ত হয়েছিল ৩০ নভেম্বর এবং আমার আবাসস্থল বোদা থানা হানাদার মুক্ত হয়েছিল ১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে। আমি ভারত থেকে বোদা ফিরি ৩ ডিসেম্বর। আমি অবশ্য শরণার্থীশিবিরে ছিলাম না। পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাটের পতিরামপুরের কাছাকাছি এক আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলাম। সেখানে ভারতীয় এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কেমন করে যেন বেশ ভাব হয়েছিল। নানা বিষয়ে আমার জানার আগ্রহ, রাজনীতি নিয়ে কৌতূহল দেখে তিনি হয়তো আমার প্রতি মনোযোগী হয়েছিলেন। তিনি আমাকে নানা ধরনের খবর দিতেন। নভেম্বরের শেষ দিকে তিনি আমাকে বলেন, দিন কয়েকের মধ্যে আমি দেশে ফিরতে পারব। ৩০ নভেম্বর হিলি সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হলো। ওই সামরিক কর্মকর্তা আমাকে জানালেন, তোমার পঞ্চগড় মুক্ত। আমিতো আনন্দে দিশা হারা।


পরিবারের কাউকে কিছু না বলে আমি ২ ডিসেম্বর বোদার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সারা দিন সড়ক পথে নানা মাধ্যমে শিলিগুড়ি পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। যখন মানিকগঞ্জ সীমান্ত অতিক্রম করলাম তখন সন্ধ্যা হয় হয়। পথঘাট চিনি না। তবে ৯ মাসের উদ্বাস্তু জীবনের অবসান ঘটিয়ে বাড়ি ফেরার তীব্র টানে হাঁটতে শুরু করলাম। শীতের সময়। সঙ্গে শীতবস্ত্র ছিল না। তবে হাঁটার কারণে তেমন ঠান্ডা লাগছিল না। কয় ঘণ্টা হেঁটেছি, বলতে পারব না। এক সময় ক্লান্তিতে শরীর অবশ হয়ে আসছিল। আর চলতে পারছিলাম না। অবসন্ন শরীর যখন নেতিয়ে পড়ছিল, তখনই দেখতে পেলাম কয়েকজন হাট ফেরত মানুষ। তাদের মধ্যে একজন আমাকে চিনতে পেরে তাঁর বাড়ি যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। অনতিদূরে তাঁর বাড়ি জেনে আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলাম।


কোনো রকমে পা টেনে টেনে তার বাড়ি পৌঁছে যে আতিথেয়তা পেলাম তা সারা জীবন মনে থাকবে। তাঁর সেদিনের কথাগুলো এখনো কানে বাজে। তিনি বলেছিলেন, বাবু, আপনারা তো ‘হিন্দুস্থানে’ গিয়ে আরামে ছিলেন। এখানে আমাদের কত বিপদ। একদিকে পাকিস্তানি মিলিটারির ভয়, অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর ভয়।


কথাগুলো তখনই আমার কানে বেজেছিল। আমরা যারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম তারা ’আরামে’ ছিলাম বলে অবরুদ্ধ দেশের ভেতরে যাঁরা ছিলেন তাদের ধারণা হয়েছিল। এটা যে ঠিক নয়, সেটা কি আর কোনো দিন তারা বুঝতে পেরেছেন? তাদের কি আর সেটা বোঝানো হয়েছিল?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us