গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা হলো এক অসহায় বাবা-মায়ের সঙ্গে। যাদের সন্তান লিঙ্গ বিষয়ক সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। গ্রামের মানুষ নানান কথা বললেও ওনারা চাইছেন বাচ্চাটির চিকিৎসা করাতে, পরিবারের মধ্যে রেখে তাকে বড় করতে। এই কাজে আমরা যেন তাদের সাহায্য করি, চিকিৎসার পথ বলে দেই। যেভাবেই হোক ওনারা ঢাকায় এসে চিকিৎসা করাবেন। ইতোমধ্যে শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম গ্রামে থাকা, অসচ্ছল এবং স্বল্প শিক্ষিত এই পরিবারের মানসিকতা দেখে। একজন হিজড়া শিশুকে বুকের মধ্যে ধরে রাখার কী প্রাণান্তকর চেষ্টা। গ্রামে অসংখ্য কুসংস্কারের মধ্যে বাস করেও মানুষগুলো কতটা আধুনিক চিন্তা করতে পারছেন। অথচ এই দেশের পাঁচতারকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু ছাত্রছাত্রী সেই পরিমাণ আধুনিক চিন্তা করতে পারেনি।
আধুনিক মানুষ হওয়া ব্যাপারটা খুব কঠিন একটা ব্যাপার। কেউ চাইলেই পোশাক-পরিচ্ছদে, হাবে-ভাবে, রঙে-রসে আধুনিক হতে পারেন কিন্তু মনে বা চিন্তায় প্রগতিশীল ও আধুনিক হওয়াটা খুবই ভিতরকার অনুভূতি। বাইরের কোনো কিছু দিয়ে একে অর্জন ও আত্মস্থ করা যায় না। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সজেন্ডার নারী অধিকারকর্মী হো চি মিন ইসলামের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর সেখানে যা যা ঘটেছে, তাকে অন্তত প্রগতিশীলতা বা ওপেননেস বলে না। বলে কূপমণ্ডুকতা।
আমন্ত্রিত হয়েও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ঢুকতে পারেননি তিনি। তিনি কোন চোর, গুন্ডা, বদমাইশ, খুনি বা ব্যাংকের টাকা পাচারকারি বা অন্য কোন অপরাধী নন, তিনি একজন ট্রান্সজেন্ডার। শিক্ষার্থীদের একটা অংশের চাপ মেনে নিয়ে কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিল ‘পাঁচতারকা এই বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং এখানে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশ প্রকৃতপক্ষে কূপমণ্ডুকতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি।
পোশাক ও অন্যান্য আচার আচরণে এখানে ছেলেমেয়েতে তেমন কোন পার্থক্য চোখে পড়ে না। নারী-পুরুষ উভয়ই সার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি পরে, দলবেঁধে গল্প করে, বেড়াতে যায়, হাসিঠাট্টা করে, স্মোক করে। সেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা তারা ষোল আনা ভোগ করছে। পড়াশোনাতেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রীই ভালো ফলাফল করেছে। উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বিদেশেও যায়। শুনেছি দেশে চাকরির বাজারেও তারা ভালো করছে।