গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজারে রেল চলাচলের দুয়ার খুলে গেল। উদ্বোধন করা হলো দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এবং বহুল সুবিধা-সমৃদ্ধ স্থাপনা ‘কক্সবাজার রেলস্টেশন’-এর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্ছ্বাসপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানে এই স্টেশন এবং রেললাইনের উদ্বোধন করেন সেদিন। সৌভাগ্যবশত আমারও সুযোগ হয়েছিল সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে সবার চোখেমুখে ছিল আনন্দ আর আবেগ-উচ্ছ্বাস! আমি কিন্তু সেদিন চোখ মুছেছি সংগোপনে! বেদনায় নয়; প্রাপ্তির আনন্দে! বাংলাদেশ রেলওয়ের নতুন এই দিগন্তের উন্মোচন আমাদের কক্সবাজারের মানুষের হৃদয়ে কী বিশাল তরঙ্গ তৈরি করেছে, তা দেশের অন্য জেলার মানুষের পক্ষে হৃদয়ঙ্গম করা একটু কষ্টসাধ্য। এর কারণ একটু খুলে বলি।
১৯৫৫ সালে কক্সবাজার মহকুমার মহেশখালী থানার মাতারবাড়ী গ্রামে (দ্বীপে) আমার জন্ম। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমি ওই মাতারবাড়ী স্কুলেই পড়াশোনা করেছি। সেই সময়ে আমাদের এলাকাটি বিশেষত মাতারবাড়ী এতটাই অনগ্রসর ছিল যে, সেখানে কোনো হাই স্কুল ছিল না (১৯৬৬ সাল পর্যন্ত)! বিদ্যুৎ কিংবা রেলগাড়ি তো স্বপ্ন! গত ১১ নভেম্বর রৌদ্রকরোজ্জ্বল দুপুরে উচ্চগ্রামে সিটি বাজিয়ে কক্সবাজার থেকে রেলগাড়ি যখন ছুটল রামুর পথে, তখন বুকের ভেতরে তৃপ্তির একটি অনুভূতি অনুরণিত হচ্ছিল! দু’পাশে সবুজ মাঠ আর বনানীর মাঝখান দিয়ে রেলগাড়িটি যখন ছুটছে দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে, তখন দূরে দাঁড়িয়ে চোখ মুছেছি বারবার!
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথটি শুধু রামুতেই থেমে থাকবে না। এই রেলপথ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে’র সঙ্গে যুক্ত হবে। এটি সরকারের পরিকল্পনায় আছে। এই রেলপথ কক্সবাজারের ঘুমধুম হয়ে নাফ নদ পার হয়ে মিয়ানমারের মংডুতে প্রবেশ করবে। ওখান থেকে রেলপথটি সংযুক্ত হবে চীনের কুনমিং শহরে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রেল যোগাযোগের এই ‘সংযোগ’ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আনবে ইতিবাচক ফসল। অন্যদিকে এই রেলপথ উত্তরে পঞ্চগড় থেকে দক্ষিণে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নকে করবে গতিশীল। প্রধানমন্ত্রী জানালেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এই রেলপথের একটি লাইন চলে যাবে মাতারবাড়ী দ্বীপে। সেখানে এই পথ যুক্ত হবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঙ্গে। উল্লেখ্য, এই রেলপথের কারণে যে শুধু কক্সবাজার শহরই উপকৃত হলো, তা কিন্তু নয়। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী থেকে এই রেলপথ আরও আটটি স্টেশন তথা আটটি স্থানকে করেছে সমৃদ্ধ। দোহাজারীর পরে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু এবং কক্সবাজার স্টেশন অন্তর্ভুক্ত।