একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
এক শ বছর আগে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ কোনো শিক্ষার্থীকে জ্ঞানী করে তোলা নয়, সমাজের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতা করে চলার মানসিকতা নিয়ে বড় করে তোলা।’ আবার জগদীশচন্দ্র বসু বলেছেন, ‘সবার একজন হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’ তাহলে সমাজ থেকে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, নমনীয়তা মানুষের মধ্য থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে কেন?
১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়েছে। কোনোভাবেই বৃষ্টি থামছে না। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বড় আকারের একটা বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময়ই আইনস্টাইনের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ‘সময়ের প্রহেলিকা’ শিরোনামে একটি বক্তৃতা ঢাকা পরমাণু শক্তি কমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় আমার এক শুভানুধ্যায়ী বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীনের অনুরোধে বিজ্ঞান লেখক আবদূল্লাহ আল-মুতীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সেই মোতাবেক খ্যাতনামা এই বিজ্ঞান লেখকের বাসায় এক দুপুরে যাওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পর তাঁর আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
সচিব পর্যায়ে চাকরি করার পরও তাঁর রুমে কোনো বিলাসিতার আড়ম্বরতা চোখে পড়েনি। বই দিয়ে ঠাসা মাঝারি আকৃতির একটি রুম। সেখানেই বসার ব্যবস্থা। পড়াশোনা, সে-সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন তা বোঝা গেল। কুশলাদি জানার পর তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকলেন; বিশেষ করে পত্র-পত্রিকায় লেখা ও টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক শ্রোতাদের নানা প্রতিক্রিয়া। এ রকম একটা প্রাসঙ্গিক জায়গা ধরে বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীন বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা স্যার, তাহলে তো পাবলিক অনুষ্ঠানগুলোও খুব জরুরি।’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই। তবে এটি অথেনটিক হতে হবে।’
কিন্তু এই অথেনটিকের বিচার করবে কে? বই পড়া, ডকুমেন্টারি দেখা এবং সে-সম্পর্কে আলোচনা করাও তো একধরনের মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চার একটা পথ হতে পারে। এটা শুধু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করবেন, এমন তো কোনো কথা হতে পারে না। যে কেউ তো তা করতে পারেন। তা না হলে জ্ঞানের বিস্তার ঘটবে কেমন করে, গণমুখী চর্চাই বা হবে কেমন করে?
তা ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াবেন এবং ডিগ্রি প্রদান করবেন? জ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত হবেন না, সমাজের অন্যান্য প্রবাহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাবেন না?