সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্ব অর্থনীতি বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। শ্রীলংকার দৃষ্টিকোণ থেকে তাকালে কভিড-১৯ মহামারী যেমন বড় আকারের আর্থসামাজিক ক্ষয়ক্ষতি বয়ে এনেছে তেমনি অর্থনীতির দুর্বল পয়েন্টগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন আনা সম্ভব হওয়ার পাশাপাশি কভিডকালে ‘নিউ নরমাল’ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খেতে শিখতে হয়েছে বিভিন্ন অর্থনীতিগুলোকে। কিন্তু এর সঙ্গে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। এতে বিশ্বব্যাপী পণ্যবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সামনের দিনগুলোয় ঝুঁকি ও পণ্যবাজারে অস্থিরতা বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে বৈশ্বিক উৎপাদনে শ্লথগতি দেখা দিলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো কিছুটা দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর দাঁড়িয়ে বেশ সক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছে অঞ্চলটির অর্থনীতি। তবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তা সামনে রাখলে বেশকিছু শঙ্কার বিষয় হাজির হবে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বোঝাপড়া বাড়ানো এক্ষেত্রে খুবই জরুরি যদি পরবর্তী ধাপে আমরা পা রাখতে চাই।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথগতির মধ্যে দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলোর জোট সার্কের উচিত গোড়া থেকে চিন্তা করা। কার্যকর ও প্রায়োগিক কৌশল নিয়ে দ্রুত কাজ করা, যেন চলমান বিরূপ সময়ের মোকাবেলায় আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলকে সহায়তা করা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিকে টেকসই করতে হলে আঞ্চলিকতাবাদ জরুরি। এখনো আন্তঃআঞ্চলিক সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারেনি দক্ষিণ এশিয়া। পাশেই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাজার ও পরাশক্তি ভারত। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কেবল প্রবৃদ্ধি গতিশীল করাই সম্ভব নয়, পাশাপাশি সম্ভব দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবেলা করা। সার্কের প্রতিটি সদস্য দেশের বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জনসংখ্যা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সামরিক সক্ষমতার দিক থেকেও অবস্থান ভিন্ন। এটা বলা অযৌক্তিক নয় যে দক্ষিণ এশিয়া কয়েকটি জাতিগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত। কিন্তু এর পরিসর মোটেই ছোট নয়। আজকের দক্ষিণ এশিয়া ২০০ কোটি মানুষের বসবাস, যা বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর ২৫ শতাংশ।