সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। আমরা নৌকা ফুটো হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছি বহু আগেই, তবে মেরামতের দিকে মোটেও নজর দেওয়া হয়নি– সমস্যা ওখানেই। ইদানীং নিম্নমুখী রিজার্ভ, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের দাম উদ্বেগের উৎস হয়ে উঠছে; চায়ের কাপে ঝড় উঠছে এবং গুজবের জন্ম হয়ে ডালাপালা বিস্তৃত হচ্ছে। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বিনা পূর্বাভাসে সংঘটিত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব হিসাবনিকাশ পাল্টে দিল। খাদ্যসামগ্রী, বিশেষত গম ও সার আমদানিতে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশ পড়ল বিপাকে। একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, অন্যদিকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে পতন হুহু করে বেড়ে ওঠা মূল্যস্ফীতির আগুনে জ্বালানি দিল; অন্যদিকে দ্রুত পতন ঘটতে লাগল রিজার্ভের। এর মধ্যে আইএমএফের সঙ্গে সংলাপ শেষে শর্তযুক্ত ঋণপ্রাপ্তি পরিস্থিতি খাদের কিনারে যেতে দেয়নি– এই যা রক্ষা।
বাংলাদেশকে এখন দারুণ চিন্তায় ফেলেছে অনেক কিছু। তবে সব ছাপিয়ে এখন ডলারের বিপরীতে টাকার মানে ধস ও রিজার্ভের পতন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। যারা বলছেন আমরা খুব ভালো আছি, সবকিছু ভালো চলছে, তারা যেমন ঠিক নন; তেমনি যারা গেল গেল রব তুলছেন, তারাও ঠিক নন। বাংলাদেশের বর্তমান নাজুক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেদিকে নজর দেওয়া হবে এই মুহূর্তের সহি কাজ। ডুবন্ত মানুষকে আগে উদ্ধার এবং পরে বকাবকি করা হবে বুদ্ধিমানের দৃষ্টিভঙ্গি।
২০২১ সালের আগস্ট মাসের ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অবশ্য ইডিএফ ফান্ডের আট বিলিয়ন বাদ দিলে রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারে, যা উদীয়মান চ্যালেঞ্জের দিকে আঙুল তোলে।